চেয়ার ছয় লাখ, ময়লার পাত্র আড়াই লাখ টাকা!

প্রকল্পের কেনাকাটার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক দাম নির্ধারণের বিষয়টা দেশে নতুন কিছু নয়। তবে এবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক প্রকল্পের আওতায় পণ্যের যে দাম ধরা হয়েছে সেটা ‘অস্বাভাবিক’ সীমাও ছাড়িয়ে গেছে। সাধারণত কয়েকগুণ বেশি দামে পণ্য কেনার ঘটনা একাধিকবার গণমাধ্যমে এসেছে। তবে এবার প্রচলিত দামের চেয়ে হাজারগুণ বেশি ধরা হয়েছে কোনো কোনো পণ্যে।

তুলনা করতে গেলেই চক্ষু ছানাবড়া! ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন (এলডিডি)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দুধে পানি পরীক্ষার একটি যন্ত্রের দাম ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা, অথচ বাজারে এই যন্ত্রটি কিনতে পাওয়া যায় মাত্র ৬০ টাকায়। একটি বর্জ্য রাখার পাত্রের দাম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কমবেশি ৫০০ টাকায় পাওয়া যায়।

প্রকল্প পরিচালকের অতিথিরা আসবেন, তাই প্রতিটি চেয়ার কেনার জন্য দাম ধরা হয়েছে ৬ লাখ টাকা করে। একই মানের চেয়ার বাজারে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা করে। গাভি গর্ভবতী কিনা, তা পরীক্ষার জন্য এক ইউনিট কিটের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ২৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এসব কিট বাজারে পাওয়া যায় মাত্র ৯০০ টাকায়।

‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন’ নামক এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এমন অস্বাভাবিক দাম রেখেই এর অনুমোদন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন শুধু কেনাকাটা বাকি। অস্বাভাবিক দামের এই কেনাকাটাই শুধু নয়, প্রকল্পের আওতায় আছে অস্বাভাবিক বিদেশ যাত্রাও। গরু-ছাগলের উন্নয়নে বিদেশে প্রশিক্ষণ নেবেন মাঠ পর্যায়ের ১০৫০ জন কর্মী।

জনপ্রতি ৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা করে তাদের পেছনে মোট ব্যয় হবে ৫৫ কোটি ৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এছাড়া আলাদাভাবে বিদেশে প্রশিক্ষণ নেবেন ৭৫ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যাদের পেছনে ব্যয় হবে ৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা করে মোট ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

এই প্রকল্পের ব্যাপারে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই প্রকল্পটি অনুমোদন করে নেওয়া হয়েছে। তবে এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর আগে আমি যখন পূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম, তখন সেখানে বালিশ কাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্তদের ছাড় দেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রেও প্রকল্পের আওতায় অস্বাভাবিক দামে কেনাকাটাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

এসএইচ-০৮/২৪/২০ (অনলাইন ডেস্ক)