শিক্ষকরা পেশা বদলিয়ে ফেলছেন?

শিক্ষকরা

অন্য পেশায় সরে যাচ্ছেন বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের শিক্ষকরা। সুযোগ পেলেই প্রশাসনসহ অন্য চাকরিতে যাচ্ছেন। কাঙ্ক্ষিত মর্যাদা ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা বেশি পেতেই এমনটা ঘটছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩২তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন মো. ফয়সাল ফেরদৌস। চাকরি করেন ২০১৬ সালের মে পর্যন্ত। এরপর পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে চাকরির সুযোগ পেয়ে সেখানে যোগদান করেন।

একইভাবে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের আল আমিন শিক্ষকতা ছেড়ে আনসার ক্যাডারের সহকারী পরিচালক পদে আসেন। উদ্ভিদবিজ্ঞানের সাবেক এ শিক্ষক এখন ১২ আনসার ব্যাটালিয়নের অধীনে শেরপুর জেলার নলিতাবাড়ি উপজেলায় কর্মরত।

খুলনার সরকারি ব্রজলাল কলেজে মার্কেটিং পড়াতেন ইসমাইল হোসেন। প্রভাষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন ২০১৪ সালের আগস্টে। চার বছর চাকরির পর প্রশাসন ক্যাডারে সুযোগ পেয়ে বদলে ফেলেন পেশা। এখন তিনি গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার। ৩৭তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের জোবায়দা সুলতানাও পেশা বদলেছেন। শিক্ষকতা ছেড়ে এখন নাটোরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার তিনি।

মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিনিয়তই শিক্ষকদের পেশা বদলানোর আবেদন করতে দেখা যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত ২২ জুন স্বাক্ষরিত জারি করা আদেশে দেখা গেছে, ৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন জানিয়েছেন তিনজন।

বিভিন্ন সময় বিসিএস-এ অংশ নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও আবেদন করেন অনেকে। তাদের অনেককে মৌখিক পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে শর্তসাপেক্ষে। শর্তে বলা হয়েছে, প্রার্থিত পদে চাকরি পেলে বর্তমান চাকরিতে ইস্তফা দিতে হবে তাদের।

শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, যেকোনও ক্যাডারের তুলনায় শিক্ষায় কর্মরতরা বৈষম্যের শিকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের একজন উপসচিব গাড়ি কেনার জন্য লোন পান। চালকসহ রক্ষানাবেক্ষণের জন্য ৫০ হাজার টাকা পান। অথচ একজন অধ্যাপক গাড়ি কেনার ঋণও নিতে পারেন না। তা ছাড়া এখন শিক্ষকদের আগের মতো সম্মানের চোখেও দেখা হয় না। এসব কারণেই তারা অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘শিক্ষকদের ক্যাডার করে তাদের উচ্চাভিলাসী করা হয়েছে। সবাই অফিসার হতে আসেন। প্রশাসনিক পদে যেতে চান। শিক্ষকতা করতে চান না। অথচ পাশের দেশ ভারতেও শিক্ষকদের ক্যাডার করা হয়নি। আসলে এরা শিক্ষক হতেই আসেন না। শিক্ষক হচ্ছেন সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। কিন্তু যারা পেশা বদলাচ্ছেন তারা সমাজ বদলানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসেন না।’

এসএইচ-০৫/২৫/২১ (অনলাইন ডেস্ক)