সাক্ষী না আসায় বর্ষবরণে যৌন হয়রানি মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না!

পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে ঢাকার টিএসসিতে যৌন হয়রানির ঘটনার দায়ের করা মামলায় ৭ বছর পার হলেও বিচার শেষ হয়নি। বিচার কবে শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না মামলার আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাহফুজা পারভীনের আদালতে বিচারাধীন। দীর্ঘদিন ধরে সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় মামলার কোনো অগ্রগতি নেই।

মামলার একমাত্র আসামি কামালের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১৯ জুন চার্জ গঠন করা হয়। এরপর প্রায় ছয় বছরে মাত্র ৭ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও পুলিশ তাদের হাজির করতে পারছে না।

সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির করতে পারেনি। এজন্য আদালত আগামী ২৪ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন। বর্তমানে আসামি কামাল হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মামলাটি প্রথমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩, এরপর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এ বিচারাধীন ছিল। পরবর্তীতে মামলাটি এ আদালতে বিচারের জন্য বদলী করা হয়। এখন মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। সাত জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘মামলাটি নিয়ে আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ) সবাই তৎপর। আদালত থেকে সাক্ষী হাজির করতে থানায় সমন পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি পরিচালনা করা হচ্ছে। অনেকে ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। এজন্য সমন পাঠানো হলেও তা ফেরত আসছে। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মামলাটি শেষ করতে। আশা করছি, আগামী পহেলা বৈশাখের আগে মামলার বিষয়ে আমরা একটা সুসংবাদ দিতে পারবো। চেষ্টা করবো পহেলা বৈশাখের আগেই মামলার বিচার শেষ করতে।’

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আনিসুর রহমান জানান, মামলার এজাহারে আসামি কামালের নাম উল্লেখ ছিলো। মামলায় পুনঃতদন্তে চার্জশিটে তার নাম এসেছে। আসামি শারীরিকভাবে অসুস্থ, আবার ডায়াবেটিসের সমেস্যা।

লালবাগের খাজী দেওয়ানে সে সবজির ব্যবসা করে। ঘটনার দিন আসামি হাঁটাহাটি করার জন্য বের হয়েছিল। ঘটনা ঘটার পরে ওইটা জায়গা ফাঁকা হয়ে যায়। এরপর কামাল সেখানে হাঁটাহাটি করতে যায়। সেখানে যে কোনো ঘটনা ঘটছে, সে বিষয়ে কামাল কোনো কিছু জানতো না। সে হেঁটে এসেছিল আর তার ছবি ওই ভিডিও ফুটেজে এসেছে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা তাকে গ্রেফতার করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আসামি ভোগান্তির শিকার। এছাড়া প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার না করে অযথা ভুলভাবে তাকে মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। সে তার অপরাধ কি সেই সম্পর্কে কিছুই জানে না। ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকৃত আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত যারা সাক্ষী দিয়েছেন তারা কেউ নির্দিষ্টভাবে কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ বলতে পারেনি। আশা করি বিচার শেষে আসামি খালাস পাবে।’

মামলার অভিযোগ থেকে যানা যায়, ২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি এলাকায় কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়। ওই ঘটনায় ভিকটিমদের পক্ষ থেকে কেউ মামলা না করায় শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। শাহবাগ থানা পুলিশ মামলাটি কয়েকদিন তদন্তের পরই তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেয়।

একই বছরের ১৭ মে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও থেকে আটজন যৌন হয়রানিকারীকে শনাক্ত ও তাদের ছবি পাওয়ার কথা জানান তৎকালীন পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক। শনাক্তদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ।

২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর আসামিদের নাম-ঠিকানা না পাওয়ার অজুহাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর শনাক্তকৃত আসামিদের মধ্যে মো. কামাল (৩৫) গ্রেফতার করে মামলাটি পুনঃতদন্তের আবেদন করা হয়।

ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পুনঃতদন্তের আদেশ দেন। পুনঃতদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক একমাত্র আসামি কামালকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলাটিতে চার্জশিটে ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মধ্যে মাত্র তিন জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

এসএইচ-০৪/২৩/২৩ (অনলাইন ডেস্ক, সারাবাংলা)