ঈদ ছাপিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা সরব

মাস ছয়েক পরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে একটা নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়েছে দেশের রাজনীতিতে। নির্বাচনের এ রেশ থাকবে এবারের ঈদুল আজহার উৎসবেও। অনেকেই ঈদকে বেছে নিবেন নিজের প্রার্থিতা জানান দেওয়ার উপলক্ষ হিসেবে। এ ছাড়া ঈদের পরেই ঢাকায় আসবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। জুলাইয়ে ঢাকা আসবেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই আন্ডার সেক্রেটারিও।

আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা বেশ সরব। তাদের চাওয়া একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। কারণ, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অবস্থান এখনই পরিষ্কার করতে হবে।

এদিকে আগামী জুলাই মাসে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসছেন। আগামী নির্বাচনকে ঘিরেই তাদের এই সফর বলে সূত্র জানিয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যকে সহায়তা করতে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে। সেই পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের একাধিক আন্ডার সেক্রেটারি ঢাকায় আসছেন। উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ নিয়ে ঘোষিত ভিসানীতি প্রণয়নের পিছনের কারিগর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর নামও রয়েছে বলে সূত্রে

জানা গেছে। তবে তাদের আগমনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনো বলা হয়নি। মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরের সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।

জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখা হচ্ছে। ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। আগামী নির্বাচন কেমন হবে, ন্যূনতম কোন প্রক্রিয়ায় সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেÑ এসব বিষয় জানার চেষ্টা করেছেন। এসব বৈঠকের প্রতিবেদন নিয়ে তিনি ওয়াশিংটন গেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য দেখতে চায়। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত বলেও তিনি জানান। উল্লেখ্য, চলতি বছর শেষ কিংবা আগামী বছরের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এদিকে প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণে আগামী ৮ জুলাই ঢাকায় আসছেন ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের উচ্চপর্যায়ের ‘স্বাধীন পর্যালোচনা মিশন’। নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ ইইউ পর্যবেক্ষক দল পাঠানো ‘কার্যকরী’ হবে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখবে ওই মিশন। সফরকারী দলের তৈরি করা প্রতিবেদন ইইউর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি জোসেফ বোরেলের কাছে যাবে। তিনি বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেশে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেবেন। অবশ্য জোসেফ বোরেল ইতোমধ্যে বলেছেন, পর্যবেক্ষক মিশন তখনই মোতায়েন করা হবে যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য কোন কোন বিষয়কে বিবেচনায় নেওয়া হবে, তা পর্যালোচনা মিশনের প্রতিবেদনে উঠে আসবে বলে জানা গেছে।

ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা এখানে রাজনীতিতে মধ্যস্থতা কিংবা হস্তক্ষেপের জন্য নই; শোনা ও বোঝার জন্য আমরা এখানে। আমরা সব দলের সঙ্গেই বসব। তা ছাড়া আমরা এখানে কোনো সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা দেখতে চাই না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের মানুষও এটাই চায়। ইইউ প্রতিনিধি দলের জুলাইয়ের সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সফরকারী দলের ওই প্রতিবেদন ইইউর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি জোসেফ বোরেলের কাছে যাবে। তিনি বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেশে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেবেন। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য কোন কোন বিষয়কে বিবেচনায় নেওয়া হবে, তা পর্যালোচনা মিশনের প্রতিবেদনে উঠে আসবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, এ কারণে আমরা এখন বলতে পারি না, অমুক দল যোগ দিলে বা না দিলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে কিনা। বিশেষজ্ঞরা এই বিষয় দেখবেন এবং তাদের রাজনৈতিক অভিমত দেবেন। পরে উচ্চ প্রতিনিধি তার সিদ্ধান্ত নেবেন।

হোয়াইটলি বলেন, আপনারা আরও জানেন, আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের পর্যবেক্ষক মিশন মোতায়েনের বিষয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। পর্যবেক্ষক পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো বাধা যাতে না হয়, সেটার সিকিউরিটি হিসেবে এটা দরকার ছিল। পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দলটি সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বসবে। এটা শুধু নির্বাচনের বিষয় নয়, এখানে দেখা হবে একটি নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ও, যাতে নিরাপত্তার বিষয়ও রয়েছে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, নির্বাচন ঘিরে তৎপরতা নতুন কিছু নয়, অতীতের নির্বাচনগুলোতেও বিদেশিদের তৎপরতা ছিল। তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জুলাই মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোকে, বিশেষ করে বিরোধী দল আরও স্পষ্ট করে বললে বিএনপিকে আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান জানাতে হবে। তারা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেবে, নাকি নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনে যাবে। যদি আন্দোলনে যায়, তা হলে জনগণ সেই আন্দোলনে অংশ নেবে কিনা- সেটিও দেখার বিষয়। ক্ষমতাসীন দল অবশ্য ইতোমধ্যে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে বলে স্পষ্ট করেছে। যদি বিএনপি নির্বাচনে যায়, তা হলে একরকম নির্বাচন আর বয়কট করে- তা হলে আরেকরকম নির্বাচন।

এমএইচ-০২/২৭/২৩ (অনলাইন ডেস্ক)