নওগাঁয় আইসিইউ ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নেই

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসাবে নওগাঁসহ সারাদেশের ২৯টি জেলাকে চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি ১০টি জেলার একটি হচ্ছে নওগাঁ। এ জেলায় করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। গত ৩ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহে ১৭৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৩ জনের শরীরে করোনাভাইসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে অর্থাৎ এক সপ্তাহে সংক্রমণের হার ১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হওয়া সত্ত্বেও নওগাঁর হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

জানা গেছে, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ আধুনিক জেনারেল হাসপাতালসহ নওগাঁর কোনো সরকারি হাসপাতালেই আইসিইউ সুবিধা নেই। এছাড়া হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় রোগীদের লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমিত রোগীদের সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হলেও নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে না। কোভিড-১৯ রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যায় আইসিইউ ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা উভয়ই প্রয়োজন। আইসিইউ সুবিধা ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকায় জেলার গুরুত্বর কোভিড-১৯ রোগীদের রাজশাহী ও বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

নওগাঁ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত জেলায় ১৬ হাজার ৯৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ হাজার ৭৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬০৭জন। কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৭জন। নওগাঁ সদর হাসপাতাল ও ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য কোভিড ওয়ার্ডে ১৫০টি শয্যা রয়েছে। কোনো হাসপাতালেই আইসিইউ সুবিধা নেই।

নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে লাঘব দিতে সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। ১০ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত নওগাঁ সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনজন এবং ফ্লু ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে ৭জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এখানে গুরুত্বর কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউ সুবিধা নেই। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা নেই।

নওগাঁ আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সাইদুল হক বলেন, আইসিইউ ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকায় রোগীর অবস্থা একটু জটিল হলেও তাদেরকে রাজশাহী ও বগুড়া রেফার্ড করতে হয়। সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে অল্প কিছু ক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে নেওয়া হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা পর্যাপ্ত নয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে কিন্তু সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। আবার কমপ্রেসড অক্সিজেনের চেয়ে লিকুইড অক্সিজেন ব্যবহার করা তুলনামুলক সহজ। শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেই রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব।

তিনি আরো বলেন, সদর হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের কাজ চলছে। স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কোম্পানি ইউনিসেভের তত্ত্বাবধানে এই কাজ করছে। তবে কবে নাগাদ এই কাজ শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না। এছাড়া নওগাঁ সদর হাসপাতালে আইসিইউ বেডের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এদিকে করোনা সংক্রমণের হার বেশি থাকায় নওগাঁকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে নওগাঁর মানুষদের মধ্যে তেমন কোনো সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন নওগাঁয় কার্যকর দেখা যায়নি। মানুষজন বিধি নিষেধ না মেনে চলাফেরা করছেন।

নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন মনজুর-এ মুর্শেদ বলেন, মানুষের অসচেতনতার কারণেই করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে সাময়িকভাবে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় সাময়িকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তবে করোনা প্রতিরোধে সবাই মিলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শহর ও গ্রাম এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করতে গত ৫ এপ্রিল থেকে ১০এপ্রিল পর্যন্ত নওগাঁ জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৮৫টি মামলায় ৭৪৫জন ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে।

এসএইচ-১৩/১১/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)