একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। তাদের আজ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হতে পারে।
২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির আসন বণ্টন চূড়ান্ত হওয়ার পর বাকিদের চিঠি দেয়া হবে।
৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন হওয়ায় ৮ তারিখের মধ্যেই বিএনপিকে ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হবে। ৮ তারিখের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক চিঠি দেবে বিএনপি।
ঢাকার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে চূড়ান্ত হওয়া ১৫০ আসনে বিএনপির প্রার্থীদের চিঠি দেয়া হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য মঙ্গলবার রাতে যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, অন্তত ১৫০ আসনে একক প্রার্থীর তালিকা করা হয়েছে। ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা যেসব আসন চেয়েছে, এ তালিকায় সেসব আসন নেই।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে একক প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে অধিকাংশ আসনেই একাধিক মনোনয়নপত্র দেয় বিএনপি। কোনো কোনো আসনে ৩ থেকে ৪জনও রয়েছেন। সর্বোচ্চ ৯জনকেও একটি আসনে মনোনয়ন দেয় বিএনপি।
‘কৌশলগত কারণে’ প্রায় প্রতিটি আসনে বিকল্প প্রার্থী দেয় বিএনপি। মামলা, ঋণখেলাপি ও তথ্যগত জটিলতার কারণে অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে।
যাচাই বাছাইয়ের পর এখনও বিএনপির ৫৫৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। রয়েছেন ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীও।
এমতাবস্থায় বিএনপির নীতিনির্ধারকরা প্রার্থী যাচাই-বাছাই করে অন্তত ১৫০ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। লন্ডনে চিকিৎসাধীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তেই এগুলো চূড়ান্ত করা হয়।
এদিকে মনোনয়ন বাতিল হওয়া নেতারা প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইতিমধ্যে ইসিতে আপিলও করেছেন।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে উত্তীর্ণ হওয়ার পর জনপ্রিয় ও যোগ্যতা বিবেচনায় বাকি দেড়শ’ আসনে ৮ ডিসেম্বর একক প্রার্থীকে চিঠি দেবে বিএনপি।
এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের শরিকদের আসন বণ্টন মোটামুটি চূড়ান্ত হয়েছে। তবে আরেক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গে এখনও আসন বণ্টন চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি।
তবে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই দল, জোট ও ফ্রন্টের ধানের শীষের একক প্রার্থী তালিকার চিঠি দেয়া হবে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর।
বিধি অনুযায়ী বিএনপি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়ে যাকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার কথা বলবে, সেই হবে বিএনপি বা জোটের প্রার্থী।
বাকিরা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নির্বাচন করা থেকে বাদ পড়বেন। ১০ ডিসেম্বর সারা দেশে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, দলের একক প্রার্থী ঘোষণা করতে গত দুদিন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন।
বৈঠকে কোন কোন আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করা যায়, তার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। আজ থেকে চূড়ান্ত হওয়া একক প্রার্থীদের অনানুষ্ঠানিক চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
যেসব আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কিছু কিছু আসনে বিএনপি একক প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিয়েছে।যেসব আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য রয়েছেন সেগুলোর বেশিরভাগেই একক প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি।ওই সব আসন প্রার্থী চূড়ান্ত।
এছাড়া দলের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা রয়েছেন যারা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার বিষয়ে হাইকমান্ড আশাবাদী তাদেরকেও চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হয়েছে।
কোনো কোনো আসনে বিএনপির প্রার্থী টানা কয়েকবার জয়ী হয়েছেন। এখনও প্রার্থী ইমেজ অক্ষুন্ন রেখেছেন তাদেরকে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে একক প্রার্থী চূড়ান্তের তালিকায় থাকছেন- ঠাকুরগাঁও-১ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কুমিল্লা-২ ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নোয়াখালী-৫ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নরসিংদী-২ ড. আবদুল মঈন খান, ঢাকা-৩ গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা-৮ মির্জা আব্বাস, চট্টগ্রাম-১১ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ আবদুল্লাহ আল নোমান, সিরাজগঞ্জ-২ ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু/ রুমানা মাহমুদ, ভোলা-৩ মেজর (অব.) এম হাফিজউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা-২ ইরফান আমান, নোয়াখালী-৩ বরকতউল্লাহ বুলু, নোয়াখালী-৪ মো. শাহজাহান, লক্ষ্মীপুর-৩ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কক্সবাজার-১ হাসিনা আহমেদ, মুন্সীগঞ্জ-১ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মুন্সীগঞ্জ-২ মিজানুর রহমান সিনহা, নরসিংদী-১ খায়রুল কবির খোকন, বরিশাল-৫ মজিবর রহমান সারোয়ার প্রমুখ।
একক প্রার্থী হিসেবে আরও যারা থাকছেন-নোয়াখালী-১ আসনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, নোয়াখালী-২ জয়নুল আবদীন ফারুক, নোয়াখালী-৬ ফজলুল আজিম, লক্ষ্মীপুর-২ আবুল খায়ের ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর-৩ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, চট্টগ্রাম-৯ ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম-১৬ জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার-১ হাসিনা আহমেদ, মৌলভীবাজার-৩ নাসের রহমান, সিলেট-২ তাহমিনা রুশদীর লুনা, পঞ্চগড়-১ ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, লালমনিরহাট-৩ আসাদুল হাবিব দুলু, রাজশাহী-২ মিজানুর রহমান মিনু, নাটোর-২ সাবিনা ইয়াসমিন ছবি, ঝালকাঠি-১ ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ময়মনসিংহ-১ এমরান সালেহ প্রিন্স, মেহেরপুর-১ মাসুদ অরুণ, চুয়াডাঙ্গা-১ শামসুজ্জামান দুদু, যশোর-৩ অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, মাগুরা-২ নিতাই রায় চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ-৬ শরীফুল আলম, খুলনা- ২ নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা-৪ আজিজুল বারী হেলাল, পটুয়াখালী-১ আলতাফ হোসেন চৌধুরী, পটুয়াখালী-৪ এবিএম মোশাররফ হোসেন, গাজীপুর-৫ ফজলুল হক মিলন, গাজীপুর-১ চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী, ফরিদপুর-২ শ্যামা ওবায়েদ, ফরিদপুর-৩ চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ প্রমুখ।
বিএ-০১/০৫-১২ (ন্যাশনাল ডেস্ক, তথ্যসূত্র: যুগান্তর)