প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (বামুস) কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাময়িক সনদ আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। ৪৭ হাজার ‘মুক্তিযোদ্ধা’র এ সনদ রয়েছে। ফলে তাঁদের ভাতাও স্থগিত হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় চারটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে বলেছে, অন্তত একটি মানদণ্ডে নাম না থাকলে কোনো ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা বলে গণ্য হবেন না। এই চার মানদণ্ড হলো ভারতীয় তালিকা, লাল মুক্তিবার্তা, বেসামরিক গেজেট ও বাহিনীর গেজেট। এই চারটির অন্তত একটিতে নাম থাকলে তা ৩০ জুনের মধ্যে আবেদন করে মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে।
আবার মহানগর বা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি যাঁদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে বা যাঁরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে প্রমাণিত হয়েছেন, তাঁদের সম্মানী ভাতাও স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কারও নাম যদি চারটি মানদণ্ডের একটিতে থাকে, তবে তিনি পুনরায় আবেদন করতে পারবেন।
সব ইউএনওকে ৩০ জুনের মধ্যে এসব আবেদন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকা আবেদন পরীক্ষা করবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, তদন্ত ও প্রমাণ ছাড়া যাঁদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের সবার ভাতা স্থগিত থাকবে। কোনো প্রামাণিক দলিল ছাড়া কাউকে ভাতা দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত সনদ স্থগিতের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ সনদ খুব সহজ প্রক্রিয়ায় দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেকেই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর সই স্ক্যান করে সনদ জাল করেছেন। তাই পুনরায় যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যে চারটি মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে, তার মধ্যে ভারতীয় তালিকায় একাধিক ভাগ আছে। যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা পদ্মা, মেঘনা, সেক্টর এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী। লাল মুক্তিবার্তার মধ্যে ‘লাল মুক্তিবার্তা’ ও ‘লাল মুক্তিবার্তা স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা’ নামে দুটি ভাগ আছে।
বেসামরিক গেজেটের মধ্যে বেসামরিক গেজেট, মুজিবনগর, বিসিএস ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিসিএস, স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দসৈনিক, বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী ও বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা গেজেট।
বাহিনী গেজেটের মধ্যে রয়েছে সেনা, বিমান, নৌ, নৌ কমান্ড, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনী গেজেট।
২০০৮-০৯ সালে ১ লাখ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেলেও ২০১৭-১৮ সালে ভাতা দেওয়া হয় প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার জনকে। ২০০৯ সালে সম্মানী ভাতা ছিল ৯০০ টাকা। তা বাড়িয়ে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১০ হাজার টাকা করেছে সরকার। দুটি উৎসব ভাতাও দেওয়া হয়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অর্ধেকই মারা গেছেন। অনেকেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করার কারণে এই সুবিধার আওতায় আসতেই পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমার তো মনে হয় ৮০ হাজারের বেশি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিচ্ছেন।’
গত ৪৮ বছরে ছয়বার মুক্তিযোদ্ধা তালিকা সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার বয়স, সংজ্ঞা ও মানদণ্ড পাল্টেছে ১১ বার।
বিএ-১২/১০-০৫ (ন্যাশনাল ডেস্ক, তথ্যসূত্র: প্রথম আলো)