যে কারণে সংসদ লাইব্রেরি থেকে বই নিতে পারবেন না মাহবুব তালুকদার

বহুল আলোচিত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে জাতীয় সংসদের লাইব্রেরি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হলেও তার নামে বই ইস্যুর অনুমতি দেয়া হয়নি। এ জন্য তিনি লাইব্রেরি ব্যবহার করলেও সেখান থেকে কোনো বই বাইরে নিয়ে যেতে পারছেন না। শুধু তাই নয় চারটি শর্তে তিনি সংসদের লাইব্রেরি ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছেন।

কমিশন বৈঠকে একাধিকবার নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দিয়ে খবরের শিরোনাম হওয়া এই কমিশনার সম্পর্কে সংসদ সূত্র জানায়, প্রথমে ১ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি সংসদের লাইব্রেবি ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছিলেন। কিন্তু পরে বিশেষ বিবেচনায় সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তিনি লাইব্রেরি থেকে কোনো বই বা ডকুমেন্ট বাইরে নিয়ে যেতে পারবেন না। এই শর্তে রাজি হয়েই তিনি সেখানে যাচ্ছেন।

অন্য শর্তগুলো হলো- লাইব্রেবির ভেতর ধূমপান অথবা কিছু খাওয়া যাবে না, কোনো মোবাইল বা ক্যামেরা ধারণ করা যাবে না এবং গ্রন্থাগার ব্যবহারের সময় নীরবতা পালন করতে হবে।

মাহবুব তালুকদারকে বই ইস্যু না করা সম্পর্কে জানতে চাইলে গ্রন্থাগারের উপপরিচালক জেব-উন-নেছা মঙ্গলবার বলেন, আমাদের গ্রস্থাগারের একটা নীতিমালা আছে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী এমপিরা পদাধিকার বলে গ্রন্থাগারের সদস্য। শর্তসাপেক্ষে শুধু তাদের নামেই বই ইস্যু করা হয়। এছাড়া সংসদের কর্মকর্তাদের নামে বই ইস্যু করা হয়। তারা বাসায় নিয়ে গিয়ে চর্চা করতে পারেন এর বাইরে আর কারও নামে বই ইস্যুর সুযোগ নেই। সে যদি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানেরও কেউ হন তাও আমরা কিছুই করতে পারব না। আমাদের গ্রন্থাগারের অনেকে গবেষণা করেন। তাদের নামেও বই ইস্যু করা হয় না।

এদিকে গ্রন্থাগারের একাধিক ব্যক্তি জানান, মাহবুব তালুকদার মূলত কথাসাহিত্যিক। তিনি গ্রন্থাগারের বিভিন্ন ধরনের উপন্যাস ও গবেষণাধর্মী বই পড়েন। সাধারণত সংসদের অধিবেশন চলাকালীন বাইরের কেউ লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারেন না। কিন্তু বিশেষ অনুমতি নিয়ে অধিবেশন চলাকালীন তাকে লাইব্রেরি ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছিল।

জানা যায়, অধিবেশন না থাকলে সংসদের লাইব্রেরিটি রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। আর অধিবেশনকালে সকাল ৯টা থেকে বৈঠক শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। অধিবেশন চলাকালীন শুক্র ও শনিবারও লাইব্রেরি খোলা থাকে। এদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।জানা যায়, অধিবেশন না থাকলে সংসদের লাইব্রেরিটি রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। আর অধিবেশনকালে সকাল ৯টা থেকে বৈঠক শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। অধিবেশন চলাকালীন শুক্র ও শনিবারও লাইব্রেরি খোলা থাকে। এদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

সংসদের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে পাঁচ হাজার পুস্তক ও চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ঢাকায় পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৬ সালে এর নামকরণ করা পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদ গ্রন্থাগার। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তেজগাঁওয়ে পুরাতন সংসদ ভবনে গণপরিষদ গঠিত হলে সেখানে গ্রন্থাগারও প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ গঠিত হলে এ গ্রন্থাগারকে ‘জাতীয় সংসদ লাইব্রেরি’ নামকরণ করা হয়। ১৯৮৫ সালে এ গ্রন্থাগারকে শেরেবাংলা নগরের বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়। আইন প্রণয়ন কাজে সংসদ সদস্যদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করাই জাতীয় সংসদ গ্রন্থাগারের মূল উদ্দেশ্য।

তিনি বলেন, গ্রন্থাগারে বর্তমানে প্রায় ৮৫ হাজার পুস্তক, সাময়িকী, গেজেট, সংসদ বিতর্ক, কমিটি রিপোর্টসহ বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য প্রতিবেদন সংরক্ষিত আছে। ১৯৭৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত প্রধান দৈনিক পত্রিকাসমূহ; বঙ্গীয় আইন পরিষদের বিতর্ক (১৯৩৭-১৯৪৬); পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইনসভা বিতর্ক (১৯৪৮-১৯৬৯); পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ বিতর্ক (১৯৪৭-১৯৬৯); হাউস অব কমন্স বিতর্ক (যুক্তরাজ্য) (১৮০৯-১৯৮০); পাকিস্তান গেজেট (১৯৪৮-১৯৭১); বাংলাদেশ গেজেট (১৯৭১-অদ্যাবধি); বাংলাদেশ গণপরিষদ বিতর্ক; বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ বিতর্ক সংরক্ষিত আছে। এছাড়া ২৪টি শিরোনামের ৬০টি দৈনিক জাতীয় পত্রিকা এবং দেশি-বিদেশি ৯টি ম্যাগাজিন কেনা হয়।

বিএ-০৩/১৭-০৯ (ন্যাশনাল ডেস্ক)