তাপসের নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস তার প্রচারণায় ঢাকাকে গড়ে তোলার নানা অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন। এসব প্রতিশ্রুতির লিখিত অর্থাৎ নির্বাচনী ইশতেহার মঙ্গল বা বুধবার (২৮ বা ২৯ জানুয়ারি) প্রকাশ করবেন তিনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এ মেয়র প্রার্থীর ইশতেহারে ‘ঐতিহ্যের, সুন্দর, সচল, সুশাসিত ও উন্নত ঢাকা’ গড়ার বিষয় প্রাধান্য পাবে বলে জানা গেছে।

তাপসের নির্বাচনী প্রচারণা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ইশতেহার চূড়ান্ত হওয়ার পর সেটি মুদ্রণের জন্য ছাপাখানায় পাঠানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ইশতেহার ঢাকাবাসীর উদ্দেশে তুলে ধরবেন সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে মেয়র পদপ্রার্থী তাপস।

ইশতেহার প্রণয়ন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাপস মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে পাঁচটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এ পাঁচটি বিষয়ের সমাধান করতে পারলে নগরবাসী তাদের কাঙ্ক্ষিত ঢাকা উপহার পাবে। এ পাঁচটি বিষয় হলো-

ঐতিহ্যের ঢাকা
চারশ বছরের পুরোনো এই ঢাকার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাসের উজ্জ্বল ছবি, ঐতিহ্যের গভীর শেকড় ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব। এখানে ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদও অনন্য। সাংস্কৃতিক ধারায় রয়েছে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, পহেলা বৈশাখ, ঘুড়ি উৎসব, চৈত্রসংক্রান্তিসহ অজস্র উৎসব। মেয়র নির্বাচিত হলে সবাইকে নিয়ে সমন্বিত প্রয়াসে মহাপরিকল্পনা ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করে ঢাকাকে তার সক্রিয় গৌরবে সাজিয়ে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা হবে।

সুন্দর ঢাকা
দুই নদীর (বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা) অববাহিকায় পত্তন হওয়া ঢাকার মতো শহর পৃথিবীতে বিরল। সুন্দর ঢাকা গড়ে তুলতে সবুজায়ন ও পরিবেশবান্ধব স্থাপনা বৃদ্ধি এবং বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নিশ্চিত করা, নারী, শিশু ও প্রবীণদের জন্য হাঁটার উন্মুক্ত স্থান তৈরি করা হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বুড়িগঙ্গার পাড় ঘিরে বনায়ন, বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনসহ ব্যাপক সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে সুন্দর ঢাকা গড়তে পরিকল্পনা নেয়া হবে।

সুন্দর ঢাকা গড়ে তুলতে বাড়ানো হবে সবুজায়ন, স্থাপন করা হবে বিনোদন কেন্দ্র

সচল ঢাকা
যানজটের কারণে রাস্তায় চলাচল দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো ও ফিরে আসতে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়, বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের বিড়ম্বনা অপরিসীম। গণপরিবহনের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিছু রাস্তায় দ্রুতগতির যানবাহন আবার কিছু রাস্তায় শুধু মানুষ চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। নদীর পাড়ে থাকবে সুপ্রশস্ত রাস্তা, যেখানে হেঁটে চলা যাবে, চালানো যাবে সাইকেল, রিকশা ও ঘোড়ার গাড়ি। দ্রুতগামী যানবাহনের জন্য থাকবে আলাদা পথ, থাকবে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা। এভাবে ঢাকাকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হবে।

সুশাসিত ঢাকা
ঢাকায় এক সময় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ছিল। মাদক নির্মূলসহ এলাকাভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হবে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা। বছরের ৩৬৫ দিন, সপ্তাহের সাত দিন, ২৪ ঘণ্টা নাগরিক সেবা দেয়ার জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবন খোলা থাকবে। মশকের প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস, মশক নিধন ও ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে দৈনন্দিন ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন, বিধি ও নীতিমালার কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে ঢাকার উন্নয়ন ও সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সিটি করপোরেশনের নিকট দায়বদ্ধ করা হবে। বারবার রাস্তা খোঁড়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।

উন্নত ঢাকা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত ‘রূপকল্প ২০৪১’ অনুসারে সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশের উন্নত রাজধানী ঢাকা গড়তে দীর্ঘ ৩০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রত্যেকটি উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মান নিরূপণ করে অন্তত ১০ বছর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা হবে।

তাপসের নির্বাচনী প্রচারণা সংশ্লিষ্ট সূত্রের ভাষ্য, ইশতেহারে তাপস মেয়র নির্বাচিত হলে নাগরিকদের সব মৌলিক সেবা ৯০ দিনের মধ্যেই নিশ্চিত করার কথা থাকছে। সেবা নিশ্চিতে অ্যাকশন প্ল্যান এবং ওয়ার্ক প্ল্যান করে সেগুলা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বুড়িগঙ্গা নিয়েও বিশেষ পরিকল্পনার কথা থাকছে ইশতেহারে। এতে বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে আমাদের এই ঢাকা শহর অবস্থিত। বুড়িগঙ্গাকে অবশ্যই বাঁচাতে হবে। যদি ঢাকার সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে হয়, সেখানেও কাজ করতে হবে। এছাড়া নদীর পাড় দিয়ে আট লেনের রাস্তা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে ঢাকার যেকোনো প্রান্তের মানুষ যেকোনো দিকে যোগাযোগ করতে পারবেন।

ঢাকার রাস্তায় যানজটের কারণে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে নগরজীবন। মেয়র নির্বাচিত হলে এ যানজট নিরসনে কাজ করবেন ফজলে নূর তাপস

ইশতেহারে আরও থাকছে, আইনে অন্য সংস্থাগুলোকে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশনা আছে বিধায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইন এবং নিয়ম-নীতি মেনে কাজ করতে হবে। ইতোপূর্বে এর ব্যত্যয় ঘটলেও আর কোনো ব্যত্যয় ঘটানো চলবে না। সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও নীতিমালা অনুযায়ী কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে।

নগরবাসীর অভিযোগ শোনার জন্য একটি অ্যাপস তৈরি করা হবে। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা সমাধানের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে লোক পাঠিয়ে সেই সমস্যার সমাধান করা হবে। নগরবাসী সেবক হিসেবে নির্বাচিত করে সিটি করপোরেশনে পাঠালে নগরবাসীর কল্যাণে যে যে পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তাপস তা-ই নেবেন বলে উল্লেখ থাকছে ইশতেহারে।

শনিবার পুরান ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজের নিচ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর সময় মেয়র প্রার্থী ফজলে নূর তাপস জানান, ঢাকা দক্ষিণের উন্নয়নের বিস্তারিত রূপরেখা তুলে ধরে ২৮ অথবা ২৯ জানুয়ারি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করবেন তিনি।

তাপস বলেন, পাঁচটি রূপরেখা ধরে আমরা কাজ করবে। আমাদের ঐতিহ্যের ঢাকা, আমাদের সুন্দর ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা, আমাদের সচল ঢাকা এবং উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে কাজ করবো। আমি বিশ্বাস করি, ঢাকাবাসী নৌকায় তাদের রায় দিয়ে আমাকে সেবক হিসেবে নির্বাচিত করবে।

বিএ-১৪/২৭-০১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)