আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় অভিযোগ

আসিফ

ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট, জঙ্গিবাদে উসকানি এবং দেশের তরুণ সমাজকে জঙ্গিবাদের মতো ঘৃণ্য কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য দায়ী করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ছাত্রলীগ।

বুধবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক মো. নাহিদ হাসান শাহিন এ অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে শাহিন উল্লেখ করেন, ১৭ আগস্ট অধ্যাপক আসিফ নজরুলের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমানবন্দর ধরনের দৃশ্য বাংলাদেশেও হতে পারে’ একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। স্ট্যাটাসটি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি, সুনাম ও দেশের আইন শৃঙ্খলা অবনতি ঘটাতে পারে। তার স্ট্যাটাসটি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিই নয় বরং আক্রমণাত্মক তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে তরুণ সমাজকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে ও দেশের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি করার মাধ্যমে শান্তি বিনষ্ট করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সহায়ক।

বিষয়টি থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান শাহিন।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদুদ হাওলাদার বলেন, অভিযোগটি সাইবার সংক্রান্ত হওয়ায় গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার বিভাগে মতামতের জন্য পাঠানো হচ্ছে। সাইবার বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মঙ্গলবার অধ্যাপক আসিফ নজরুল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমানবন্দর ধরনের দৃশ্য বাংলাদেশেও হতে পারে।’

ওই স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচি থেকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল শিক্ষক নামের কলঙ্ক। গণপিটুনি দিয়ে আসিফ নজরুল গংদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি থেকে বিতাড়িত করা হবে।

লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘তিনি (আসিফ নজরুল) এর আগেও এক বক্তৃতায় বলেছেন, কেউ শিবির করলে কী হয়েছে? শিবির হলেই তাকে মারতে হবে? আমরা বলতে চাই, কোনো ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। শিবির করলেই তাকে মারতে হবে।’

ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শিক্ষক জাতির বিবেক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে আমরা দেশপ্রেম, প্রগতিশীলতার চর্চা শিখেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই অগণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্রলীগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে রাজপথে থাকেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল শিক্ষক নামের কলঙ্ক। তিনি বিভিন্ন সময় জামায়াত-শিবির এবং জঙ্গি বাহিনী নিয়ে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেন। তালেবানি আদর্শপুষ্ট বিএনপি-জামায়াতের দালালি করার জন্য এই শিক্ষক ফেসবুকে দুঃসাহস দেখিয়েছেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে এই আসিফ নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করার ব্যবস্থা করুন। আপনারা যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তাহলে আমরাই দায়িত্ব হাতে তুলে নেব। আমরা জানি কীভাবে এদের শায়েস্তা করতে হয়। এর থেকে অনেক বড় রাঘববোয়ালরা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছেন। সুতরাং দুঃসাহস দেখানোর কোনো অবকাশ নেই। আমরাই তাদের রুখে দাঁড়াবো।’

আফগানিস্তানে তালেবান বিদ্রোহীদের ক্ষমতা দখলের পর কাবুল বিমানবন্দরের দৃশ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।

তার এই বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ এক মন্তব্যে বলেন, ‘আসিফ নজরুল কী শেষমেশ স্বীকার করলেন তার প্রিয় বিএনপি-জামায়াত আসলে বাংলাদেশের তালিবান?’

আজাদ মাস্টার নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে কয়েক বছর আগে তালেবান স্টাইলে তারা বোমাবাজি, পেট্রোল দিয়ে অগ্নিসংযোগ করে সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো নানা জায়গা দখল করে হত্যাযজ্ঞ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছেন। সেইটা তো ফ্লপ হয়েছে, এখন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে আসিফ নজরুল স্যার কাবুলে হিজরত করতে পারেন ইচ্ছা করলে।’

কেউ কেউ তাকে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানিয়েছেন। অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আসিফ নজরুল জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের লোক। তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলে সব …’

আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলাম সজিব বলেন, ‘কাবুলে যে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন চিপ নরজুল ভাই।’

এসএইচ-১৭/১৮/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)