‘বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ হিসেবে দুর্যোগে বেশি ঝুঁকিতে বাংলাদেশ’

বিশ্বের

বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।

তিনি বলেন, জলবায়ুর ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দুর্যোগ ঝুঁকি-হ্রাস বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে সরকার ১০০ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (ডেল্টা প্ল্যান)-২১০০ প্রণয়ন করেছে।

প্রতিমন্ত্রী মঙ্গলবার ঢাকায় পর্যটন কর্পোরেশন প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত “জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ” বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ২১০০ সাল নাগাদ স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাসমূহের সমন্বয়ে যোগসুত্র সৃষ্টি করবে এ ডেল্টা প্ল্যান। এভাবে দুর্যোগে ঝুঁকি হ্রাসে জীবন ও সম্পদের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দুর্যোগ সহনীয়, টেকসই ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পিতভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা হতে মানুষের জানমাল রক্ষার্থে মাটির কিল্লা নির্মাণ করা হয়, যা সর্ব সাধারণের কাছে মুজিব কিল্লা নামে পরিচিত। তারই আধুনিক রূপে উপকূলীয় ও বন্যা উপদ্রুত ১৪৮ টি উপজেলায় ৫৫০ টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, উপকূলীয় দুর্গত জনগণ যেমন সেখানে আশ্রয় নিতে পারবে তেমনি তাদের প্রাণিসম্পদকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারবে। এছাড়া জনসাধারণের খেলার মাঠ, সামাজিক অনুষ্ঠান ও হাট-বাজার হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যাবে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বনেতাদের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করেন । বিষয়সমূহ হচ্ছে (১) বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিকত ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কমিয়ে আনা, (২) বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বিলিয়ন ডলার ৫০ অনুপাত ৫০ হিসাবে অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ভাগ করে দেয়া এবং লস অ্যান্ড ড্যামেজ এর ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া, (৩) উন্নত দেশ, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিখাতের এগিয়ে আসা, (৪) কার্বন নিউট্রাল প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও টেকনোলজি ট্রান্সফার করা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল । অনুষ্ঠানে কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেন ব্রাক ইউনিভার্সিটির এমেরিটাস প্রফেসর ড.আইনুন নিশাত।

সভাপতির বক্তৃতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে সিপিপি’র যাত্রা শুরু করেছিলেন যাঁরা আগাম সতর্কসংকেত প্রচার এবং সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের জানমাল রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক সংখ্যা ৭৬ হাজারে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, উপকূলে ৫ হাজারের বেশি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দুর্যোগে প্রাণহানির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বলেন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে সাম্প্রতিক কালে একই মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি একক সংখ্যায় নেমে এসেছে ।

এসএইচ-০৮/২৪/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)