দেশে এক কোটির বেশি শিশু ঝুঁকিতে

দেশে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের এক কোটি ২০ লাখের বেশি শিশুর জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বাংলাদেশ।

উপকূলবর্তীসহ ২০ জেলা তালিকায় শীর্ষে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের শঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দিতে না পারলে ব্যাহত হবে টেকসই উন্নয়ন।

বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙন কিংবা খরা। পরিবারগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়লে সবচেয়ে অরক্ষিত হয়ে পড়ে শিশুরা। ইউনিসেফ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের শিকার হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে ২০ জেলার ১ কোটি ২০ লাখ শিশু।

এক শিশু বলে, আমাদের আশেপাশে বাড়িঘরগুলো সব ভেঙে যাচ্ছে। এছাড়া পানি আমাদের বাসার কাছাকাছি চলে আসছে।

বন্য কবলিত এলাকার এক নারী বলেন, আমাদের বাড়িঘর সব ভেঙে গেছে। আমাদের আর কিছুই নেই। আরেকজন নারী বলেন, ঘর নেই বাড়ি নেই, পরের বাড়িতে থাকতে হয় এখন আমাদের।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইক্লোনের ঝুঁকিতে উপকূলের বাসিন্দা ৪৫ লাখ শিশু, খরায় দুর্ভোগে পড়া শিশুর সংখ্যা ৩০ লাখের মতো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের কবলে পড়া এসব শিশু গৃহহীন, ক্ষুধার্ত, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ পানিবিহীন অবস্থায় রয়েছে। হুমকিতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা সুরক্ষা। আছে শিশু শ্রম, যৌন নিপীড়নের শিকার, পাচারের ঝুঁকিও।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ শামীমা সিদ্দিকী বলেন, সরকারের মৌলিক সেবা প্রদানকারী মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর যে নীতি এবং প্রকল্প আছে তার লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত শিশু ঝুঁকি ও সুরক্ষা প্রদান করা।

জনসংখ্যার প্রায় ৪০ ভাগ যেখানে শিশু, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত না করতে পারলে সরকারের টেকসই উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলে শঙ্কা ইউনিসেফের। যদিও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর দাবি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তারপর ২০২১ থেকে ২০৪১ পর্যন্ত পার্সপেকটিভ প্ল্যান নেওয়া হয়েছে। সেখানেও কিছু দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা যাবে সে বিষয়ে বলা হয়েছে।

জলবায়ু সংকটের প্রভাবের শিকার হবার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকার ৬৫ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৫তম।

এদিকে, ইউনিসেফ বলছে, সারা বিশ্বের মোট শিশুর অর্ধেকের জীবনই দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। তাপদাহ, বন্যা, সাইক্লোন, দুরারোগ্য ব্যাধি, খরা আর বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বের প্রতিটা শিশুই ঝুঁকির মুখে পড়বে। কিন্তু বিশ্বের ৩৩টি দেশে থাকা অন্তত ১০০ কোটি শিশু জলবায়ু পরিবর্তনে খুব বেশি ভয়াবহতার শিকার হবে।

এর মধ্যে ভারত, নাইজেরিয়া, ফিলিপিন্স ছাড়াও সাব সাহারা অঞ্চলের দেশগুলো রয়েছে। ইউনিসেফের এই রিপোটর্টি করা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা কীভাবে শিশুদের ওপর পড়ছে তার ওপর ভিত্তি করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দারিদ্র্য বাড়ছে, শিশুরা সুপেয় পানি পাচ্ছে না, স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, শিক্ষার পরিবেশ থাকছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুরা যেন জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা মোকাবিলা করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে আমাদেরই।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে ১০টি দেশে, যে দেশগুলো সারাবিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের জন্য দায়ী। অন্তত ৯২ কোটি শিশু বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়বে। ৮২ কোটি শিশু তাপদাহের শিকার হবে, ৬০ কোটি শিশু ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর মতো রোগে ভুগবে। কারণ পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে মশার উপদ্রব বাড়ছেই।

ইউনিসেফের পরিসংখ্যান বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান আর ভারতের শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়বে। কারণ দেশগুলোতে দূষণের পরিমাণ অনেক বাড়ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার আরও তিনটি দেশ আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তান।

এসএইচ-০৯/২৪/২১ (অনলাইন ডেস্ক)