ইরাকে নিয়ে নারীদের যৌনপল্লীতে বিক্রি করতেন লিটন

৭০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ইরাকে পাচার হচ্ছে বাংলাদেশি তরুণীরা। সেখানে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় ১৩ থেকে ১৪ হাজার দিরহামে। এরকম একটি পাচারকারী চক্রের দুই হোতা লিটন ও তার সহযোগী আজাদকে করে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

শনিবার সকালে ঢাকা উত্তরা ও মিরপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে কিছু পাসপোর্টসহ মাদকও উদ্ধার করা হয়

শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাওরানবাজার মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

ইরাকের রাজধানী বাগদাদের স্বনামধন্য হাসপাতালে মিলবে উচ্চ বেতনের চাকরি। আছে থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা। এমন লোভনীয় অফার দিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করা নার্সদের টার্গেট করে ইরাকে পাচার করে দিচ্ছে মানবপাচারকারীরা। কমবয়সী তরুণীরাই পাচারকারীদের মূল টার্গেট। চাকরি বাবদ নেওয়া হয় দেড় থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত।

টুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে প্রথমে দুবাই, সেখান থেকে ভিসিট ভিসার মাধ্যমে ইরাকে পাঠানো হয় তরুণীদের। সেখানে পাচারকারীদের আস্তানায় রাখার পর পতিতালয়ে ১৩ থেকে ‌১৪ হাজার দিরহামে বিক্রি করে দেয়া হয় তাদের।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত লিটন ও আজাদ সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের সদস্য। বিশেষ করে বিউটিপার্লারে কাজ জানা নারী ও নার্সিং পেশায় নিয়োজিত নারীদের পাচার করেন তিনি। সেখানে সুপারশপে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তারা নারীদের পাচার করতেন। ইরাক, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে জিম্মি করে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করতেন। এসব দেশে তাদের একাধিক সেফ হাউস রয়েছে। তারা এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক নারী-পুরুষকে পাচার করেছেন।

তিনি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাওয়ার পর সুযোগ বুঝে নারীদের বিক্রি করে দেওয়া হতো। চক্রের ১০ সদস্যের মধ্যে সাতজন ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে আর বাকিরা দেশে এই কাজ করছিল। তিন থেকে চার লাখ টাকার বিনিময়ে এসব নারীকে চাকরির আশ্বাস দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাওয়া হতো। মানবপাচারের প্রথম ধাপে ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই এরপর ভিজিট ভিসার মাধ্যমে ইরাকে নেওয়া হতো। চক্রটি ৩০-৪০ জন নারীকে পাচার করেছে।

চাকরিচ্যুত মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট লিটন, ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সহযোগী আজাদের এজেন্সির মাধ্যমে ২০১৩ সাল থেকে কয়েকহাজার বাংলাদেশীকে ইরাকে পাচার করেছে। বাগদাদের পাচারকারীদের আস্তানায় ৭টি এখনও অর্ধশত নারী বন্দি বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সর্বশেষ পাচার হওয়া এক নারী র‌্যাবকে জানিয়েছে, তিনি ইরাকে সেফ হাউসে থাকাকালে সেখানে ১৫-২০ জনকে দেখেছেন। সেফ হাউস থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর এই নারী ইরাকের একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। পরে সেখান থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন। গ্রেপ্তার লিটন মিয়া ২০১৯ সালের পর আর ইরাকে যেতে পারেননি। পরে দেশেই বালু ব্যবসাসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন।

আর গ্রেপ্তারকৃত আজাদ দেশেই সিন্ডিকেটটির প্রতারণার বিষয়টি দেখতেন। দেশে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এসব নারী-পুরুষকে পাচার করা হয়। তিনি পাসপোর্ট প্রস্তুত, টাকা নেওয়া, টিকিট কেটে দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় দেখভাল করতেন।

ইরাকে বন্দি বাংলাদেশীদের উদ্ধারে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে তথ্য বিনিময় করা হবে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

এসএইচ-২৫/১১/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)