কারাগার থেকে কি বার্তা দিলেন ইভ্যালির সিইও রাসেল?

দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেল গ্রাহকের সম্মানিত আখ্যায়িত করে বলেছেন, সুযোগ এবং সময় পেলে আমাদের পক্ষে চার মাসের মধ্যেই সব জটিলতা গুছিয়ে ওঠা সম্ভব।

শনিবার বিকেলে প্রতিষ্ঠানটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানায় ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ। আইনজীবীর মাধ্যমে ইভ্যালির এমডি গ্রাহকদের উদ্দেশে এ বক্তব্য দিয়েছেন।

ফেসবুক পেজের পোস্টে ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ বলেছে, সম্মানিত গ্রাহক, বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনারা সবাই অবগত। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার অংশীদার হয়ে দেশের অনলাইন কেনাকাটাকে সবার হাতের মুঠোয় নিয়ে যেতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি অবিরাম। আমরা এ কাজকে এগিয়ে নিতে চাই। চাই আপনাদের সকলের সহযোগিতায় আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে। আর এ সুযোগ পেলে সকলের সব ধরনের অর্ডার ডেলিভারি দিতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলাম, আছি, থাকব।

বর্তমান পরিস্থিতিতে অজ্ঞাতনামা হিসেবে আমাদের সকল এমপ্লয়িরা শঙ্কার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন। আমাদের সম্মানিত সিইও এবং চেয়ারম্যান কারাগারে থাকায় আমাদের ব্যাংকিংও সাময়িকভাবে বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সার্ভারসহ, অফিসের খরচ চালানো এবং আমাদের এমপ্লয়িদের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়গুলোতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আমাদের উকিলের মাধ্যমে আমাদের সম্মানিত সিইও’র বক্তব্য হলো- সুযোগ এবং সময় পেলে আমাদের পক্ষে চার মাসের মধ্যেই সকল জটিলতা গুছিয়ে ওঠা সম্ভব।

এ পরিস্থিতিতে আমাদের সার্ভার বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। পুনরায় দ্রুত সার্ভার চালু করে দেওয়ার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গ্রাহক ও সেলারদের স্বার্থ সুরক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ সচেষ্ট। দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত হতে আমাদের এই যাত্রায় আমরা আপনাদের পাশে পেয়েছি সবসময়। আপনাদের এ ভালোবাসায় আমরা চিরকৃতজ্ঞ। সামনের দিনগুলোতেও আমরা এভাবে আপনাদের পাশে চাই। আপনাদের ভালোবাসার শক্তি আমাদের অদম্য পথচলার প্রেরণা। ইভ্যালির পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এদিকে ইভ্যালির ওয়েবসাইট ও অ্যাপ বন্ধের খবরে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার ইভ্যালির বিষয়ে ওঠা প্রতারণার অভিযোগ ও পরিচালনার নিয়ম পর্যালোচনা করতে চার সদস্যের বোর্ড গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একজন করে সাবেক বিচারপতি, সচিব, চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টের সমন্বয়ে ইভ্যালি পরিচালনার জন্য এ বোর্ড গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরের দিন বুধবার প্রতারণার অভিযোগ ও পরিচালনার নিয়ম পর্যালোচনা করতে পরিচালনা কমিটিতে দুই সচিবসহ তিনজনের নামের তালিকা হাইকোর্টে জমা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তালিকায় যাদের নাম দেওয়া হয় তারা হলেন- স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল আহসান, সংস্কার বোর্ডের সচিব ইয়াকুব আলী পাটোয়ারী এবং সাবেক সচিব মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী। এরমধ্যে একজনকে রাখা হবে কমিটিতে।

তবে ওইদিন বোর্ড গঠনের নির্দেশ পিছিয়ে দেন হাইকোর্ট। আদেশের দিন তারিখের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন জানান, কমিটি গঠনের জন্য হাইকোর্টে প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করে আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে আদেশ দেবেন আদালত।

গত সোমবার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সব নথি হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চে এসব নথি দাখিল করেন জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রার।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর এক আদেশে ১২ অক্টোবরের মধ্যে ইভ্যালির নথিপত্র আদালতে দাখিল করতে রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী নথি দাখিল করা হয়।

বর্তমানে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন কারাগারে রয়েছেন। রাসেল কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আর তার স্ত্রী গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আছেন।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা সিইও রাসেল ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির চেয়ারম্যান মো. রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন আদালত।

এরপর এদিন রাতে হঠাৎ অসুস্থবোধ করায় মোহাম্মদ রাসেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়া হয় মিডফোর্ড হাসপাতালে। তবে শারীরিক গুরুতর কোনো সমস্যা না থাকায় আবারও তাকে থানায় নেওয়া হয়।

রিমান্ডে কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি বলে দাবি করেছেন মোহাম্মদ রাসেল। তিনি বলেন, গ্রাহক জেনেবুঝেই পণ্য অর্ডার করেছে, যারা ডেলিভারি পায়নি ভবিষ্যতে টাকা পেয়ে যাবে। এখানে প্রতারণার কোনো বিষয় ছিল না।

পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে এমন খবর জানায় সংবাদমাধ্যমগুলো। বলা হয়, স্টক শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক সময় পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেননি ইভ্যালি। যাদের পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেনি তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। অনেকের ফেরত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও দাবি করেছেন রাসেল।

গ্রাহকদের টাকা আটকানোর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল দাবি করেন, জুলাই থেকে এ পর্যন্ত মোট তিন লাখ অর্ডার ডেলিভারি করেছে ইভ্যালি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা (১০% অ্যাডভান্স) এবং ইভ্যালিতে কেনাকাটায় একের পর এক ব্যাংক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ইভ্যালির নগদ জমার পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে রিফান্ড প্রক্রিয়ার গতি ধীর হয়ে যায়।

২০১৬ সালে প্রথমে অনলাইনে ডায়াপার বিক্রি দিয়ে যাত্রা শুরু করেন রাসেল। ২০১৭ সালে এই ব্যবসা করতে গিয়ে বড় একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কথা চিন্তা করেন তিনি। সেই চিন্তা থেকেই প্রতিষ্ঠা করেন দেশীয় ই-কমার্স কোম্পানি ‘ইভ্যালি’। প্রায় ১৭ লাখ নিয়মিত ক্রেতা, ২০ হাজারের বেশি বিক্রেতা নিয়ে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে স্বল্প সময়ে প্রথম সারিতে উঠে আসে ‘ইভ্যালি’।

এসএইচ-২৭/১৬/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)