জেলহত্যা দিবস আজ

আজ ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সহচর এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। দিনটি জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।

কারাগারে নিহত চার নেতা হলেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিচক্র এই চার নেতাকে গ্রেপ্তার এবং কারাবন্দি করে।

বুধবার সূর্যোদয়ের ক্ষণে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারা দেশের শাখা কার্যালয়গুলোতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে আওয়ামী লীগ। সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে সব শহীদ ও জাতীয় তিন নেতার সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। একই সময়ে রাজশাহীতে সমাহিত এ এইচ এম কামারুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও মোনাজাত করা হবে। সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন শাখা এবং সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলহত্যা দিবস পালনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জাতির জনককে তার ঐতিহাসিক ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। পরে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সমধিক পরিচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বঙ্গবন্ধুর অপর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্য এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতা হত্যার তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল লন্ডনে। এসব হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন ও বিচারের প্রক্রিয়াকে যেসব কারণ বাধাগ্রস্ত করেছে সেগুলোর তদন্ত করতে ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। তবে সেই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের অসহযোগিতার কারণে ও কমিশনের একজন সদস্যকে ভিসা না দেওয়ায় এ উদ্যোগটি সফল হতে পারেনি। তখন বাংলাদেশের সরকার প্রধান ছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।

অধ্যাপক আবু সাইয়িদের ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ফ্যাক্টস অ্যান্ড ডকুমেন্টস’ গ্রন্থে এই কমিশন গঠনের বর্ণনা রয়েছে। এতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, মনসুর আলীর পুত্র মোহাম্মদ সেলিম ও সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আবেদনক্রমে স্যার থমাস উইলিয়ামস, কিউ. সি. এমপির নেতৃত্বে এই কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ও বিদেশে অনুষ্ঠিত জনসভাগুলোতে এ আবেদনটি ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যায় যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল তা প্রমাণিত হয়েছে বলে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে। জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় (জেল হত্যা) পলাতক দুই আসামি এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধা ও দফাদার মারফত আলী শাহকে নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া ২৩৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়।

এর আগে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যার পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি, প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের ২৩ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান রায় ঘোষণা করেন।

বিচারিক আদালত রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও এল ডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেওয়া হয়।

এসএইচ-০২/০৩/২১ (ন্যাশনাল ডেস্ক)