একাত্তরের জেনোসাইডকে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাষ্ট্রের লেমকিন ইনস্টিটিউট

একাত্তরে বাংলাদেশিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নির্মম হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এ বিষয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন।

এই স্বীকৃতির জন্য শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূর গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আবেদন করেছিলেন।

শুক্রবার রাতে লেমকিন ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে ই-মেইলে পাঠানো বিবৃতিতে এই স্বীকৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান তৌহিদ রেজা নূর।

এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘লেমকিন ইন্সটিটিউটের এই স্বীকৃতি সম্ভবত বিশ্বের প্রথম কোনো জেনোসাইড বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি লেমকিন ইন্সটিটিউটের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে এক অমূল্য উপহার। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংঘটিত জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তির দ্বারোন্মোচন হলো এবং সময় পরিক্রমায় আরও অনেক সংগঠন ও দেশ বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের স্বীকৃতি প্রদান এগিয়ে আসবে।’

লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশনের নামকরণ করা হয়েছে পোলিশ রাফায়েল লেমকিনের নামানুসারে। যাকে ‘জেনোসাইড’ শব্দটির উদ্ভাবক বলা হয়।

বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের ওই অভিযানে প্রথম প্রহরে ঢাকায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এরপর ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে হত্যা করা হয় ৩০ লাখ মানুষকে।

তৌহিদ রেজা নূর জানান, লেমকিন ইনস্টিটিউটের এই স্বীকৃতির ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন জেনোসাইডসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ে কর্মরত আইনজীবী আইরিন ভিক্টোরিয়া মেসিমিনো এবং ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার অধ্যাপক ও ডিপার্টমেন্ট অব হলোকস্ট অ্যান্ড জেনোসাইড স্টাডিজের চেয়ার এলিসা ভন জোডেন ফর্জে।

তৌহিদ রেজা নূর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে গবেষণা করছেন। এর আগে গত আগস্টে তিনি একাত্তরে বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের স্বীকৃতির জন্য সারাবিশ্বের জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারস (আইএজিএস) বরাবর আবেদন করেন।

জেনোসাইডের স্বীকৃতির বিষয়ে বিবৃতিতে লেমকিন ইনস্টিটিউটর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘লেমকিন ইনস্টিটিউট ভুক্তভোগীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ও অপরাধীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য এর (জেনোসাইড) স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’

এসএইচ-০৪/০১/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)