মর্গে স্বামীর মরদেহ, আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্ত্রী

দুদিন ধরে মর্গে পড়ে আছে স্বামী সুমন শেখের মরদেহ। মামলা ছাড়া নেবেন না লাশ। আদালতে কোলের শিশু নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্ত্রী জান্নাত আক্তার। রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার দাবি তার।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে শুক্রবার  থেকে পড়ে আছে ২৭ বছর বয়সী সুমন শেখের মরদেহ। স্বামীর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, এমন দাবিতে মামলা ছাড়া মরদেহ নেবেন না স্ত্রী জান্নাত আক্তার।

রোববার ৬ বছরের শিশুসন্তান রাকিবকে নিয়ে জান্নাত হাজির হন পুরান ঢাকার আদালতপাড়ায়। আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছানো মাত্রই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

জান্নাতের অভিযোগ আত্মহত্যা নয়, নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে সুমনকে।

কান্না করতে করতে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী নির্দোষ। তাকে থানায় নেয়া হয়। পুলিশকে আমি বলেছিলাম, আমার স্বামীকে চুরির ব্যাপারে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করব। কিন্তু আমার সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয়নি। পুলিশ আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। বিস্তারিত জানতে চাইলে, পুলিশ আমাকে থানায় যেতে বলে। থানায় যাওয়ার পর আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আমার স্বামী যদি চুরি করে থাকেন, তবে দেশে আইন আছে, আদালত আছে। কিন্তু পুলিশ কেন তাকে মেরে ফেলবে? আমি এর বিচার চাই।’

জান্নাত আরও বলেন, ‘সকালে আমি কোর্টে এসেছিলাম। আর আমার মাকে নাস্তা দিয়ে পাঠিয়েছিলাম। পুলিশ নাস্তাও নেয়, আবার ১০০ টাকাও নেয়। কিন্তু আমার স্বামী তো বেঁচে ছিলেন না। তিনি তো রাতেই মারা গেছেন। তাহলে নাস্তা-টাকা কাকে দেয়া হয়েছে? তারা মেরেছেন, আবার ময়নাতদন্তও করেছেন। কিন্তু আমাদেরকে জানাননি।’

মায়ের সঙ্গে আদালতে আসা শিশুটির চোখ যেন বারবার খুঁজে ফিরছিল বাবাকে। পরিবারের দাবি, সুমন শেখ রাজধানীর রামপুরায় পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র পিওরইটের বিপণন কার্যালয়ে ছয় বছর ধরে চাকরি করতেন। তার মাসিক বেতন ছিল ১২ হাজার টাকা। শুক্রবার রাতে বাসা থেকে পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়। চুরির অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। থানায় গেলে তাদের জানানো হয়, শনিবার (২০ আগস্ট) সকালে সুমনকে আদালতে পাঠানো হবে। তবে সকালে পরিবারের সদস্যরা থানায় গেলে সুমনের মৃত্যুর কথা জানায় পুলিশ।

স্থানীয়রা বলছেন, সুমনকে বাসা থেকে ধরে নেয়ার সময় তার কাছে কোনো টাকা ছিল না। এমনকি তার মানি ব্যাগও বাসায় ছিল। কিন্তু পরে পুলিশ বলছে, তার কাছ থেকে চুরি হওয়া টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু সুমন চুরির মতো কাজ করতে পারেন না। তিনি খুব ভালো মানুষ। কোম্পানির ম্যানেজারের মনে হয়, গোপন কোনো তথ্য জেনে ফেলিছিলেন সুমন। তাই তাকে চুরির অভিযোগে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়া হয়।

সুমনের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী শনিবার হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ করে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। এসআই হেমায়েত হোসেন ও কনস্টেবল জাকারিয়াকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে করা হয়েছে সাময়িক বরখাস্ত।

পুলিশ বলছে, শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা ৩২ মিনিটে পরনে থাকা ট্রাউজার দিয়ে লোহার গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেন সুমন। তার আগে সোমবার (১৫ আগস্ট) ৫৩ লাখ টাকা চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় সুমন শেখকে।

তেজগাঁও জোনের এডিসি আজিজুল হক বলেন, কীভাবে সে ফাঁসিতে ঝুলেছে, তা সিসিটিভি ফুটেজে আছে। তার স্বজনরা সেটা দেখেছে। তার স্ত্রীসহ যারা কান্না করছিলেন, তাদের সবাইকে আলাদাভাবে দেখানো হয়েছে।

এসএইচ-১১/২১/২২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)