বিষের বোতল হাতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন

পাবনার বেড়া উপজেলায় বিয়ের দাবিতে ‘বিষের বোতল’ হাতে নিয়ে শহীদুল শেখ (২৮) নামে এক যুবকের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে অনশন করছেন জাকিয়া খাতুন (২৫) নামে এক তরুণী।

মঙ্গলবার উপজেলার রতনগঞ্জ মধ্যপাড়া গ্রামে অবস্থান নেন ওই তরুণী। এদিকে, শহীদুল শেখ তরুণীর উপস্থিতি টের পেয়েই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

জানা গেছে, ওই তরুণীর আগে বিয়ে হয়েছিল এবং তার তিন বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। সপ্তাহ খানেক আগে স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। অন্যদিকে, শহীদুল বেড়া উপজেলায় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে সহকারী হিসাব রক্ষক পদে চাকরি করেন।

প্রতিবেশীরা জানান, সুজানগর উপজেলার বিরাহিমপুর গ্রামের জাকিয়া খাতুনের সঙ্গে পাঁচ বছর আগে বেড়ার রতনগঞ্জ মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত খলিল মোল্লার ছেলে মান্নান মোল্লার বিয়ে হয়। চাকরির কারণে বিয়ের পর থেকে তারা ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। বিয়ের বছর দুয়েক পর তাদের একটি পুত্র সন্তান হয়।

এদিকে, শহীদুল শেখ ও মান্নানের বাড়ি একই গ্রামে ও একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই সুবাদে শহীদুল মান্নানের বাসায় অবাধে যাতায়াত করতেন। বছর তিনেক আগে জাকিয়ার সঙ্গে শহীদুলের প্রেমের সম্পর্ক হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে সপ্তাহ খানেক আগে জাকিয়া ও মান্নানের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

বিয়ের দাবিতে অবস্থান গ্রহণকারী জাকিয়া সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, শহীদুলের সঙ্গে তার তিন বছরের সম্পর্ক। এই সম্পর্কের বিষয় নিয়ে স্বামীর বাড়িতে গিয়ে শহীদুল নানা কুৎসা রটান। যে কারণে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে তার চরম অশান্তির সৃষ্টি হয়।

তিনি আরও জানান, শহীদুলের প্ররোচনাতেই স্বামীর সঙ্গে তার তালাক হয়ে যায়। কথা ছিল তালাকের পর শহীদুল তাকে বিয়ে করবেন। কিন্তু এখন তিনি (শহীদুল) বিয়ে করতে অস্বীকার করছেন। ফলে নিরুপায় হয়ে তিনি বিষের বোতল হাতে নিয়ে প্রেমিক শহীদুলের বাড়িতে উঠেছেন। এখন শহীদুল বিয়ে না করলে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেবেন বলেও জানান তিনি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে মাশুন্দিয়া ৫নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম মীমাংসার জন্য ছেলের পরিবারের কাছ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা নেয়। কিন্তু মেয়েটি মীমাংসার বিষয়ে কিছু জানে না।

এ সময় জাকিয়া খাতুনের আগের স্বামী সময় নিউজকে বলেন, আমাকে কবে ডিভোর্স দিয়েছে তা আমি জানি না। সপ্তাহ খানেক আগে আমি ডিভোর্সের পেপার পেয়েছি।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি ঢাকায় চাকরি করি মাস শেষে যা বেতন পাই তা আমার স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেই। সে এমন কাজ করবে তা জানা ছিল না। তবে সে আমার অনেক টাকা পয়সা নিয়ে গেছে। আড়াই বছর আগে শহীদুলের চাকরির সময় পাঁচ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন বলে তিনি জানান।

স্থানীয় মাশুন্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিরাজ হোসেন বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর ওই বাড়িতে আমি চৌকিদার ও নারী ইউপি সদস্যকে পাঠিয়েছি। এছাড়া বিষয়টি ইউএনও ও আমিনপুর থানার ওসিকেও জানিয়েছি। ঘটনার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখছি ও বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলী বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি এবং এ ব্যাপারে আমরা খোঁজ রাখছি। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহা. সবুর আলী বলেন, ‘শহীদুল আমাদের উপজেলা পরিষদেই চাকরি করেন বলে শুনেছি। তাই মেয়েটি আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে এ বিষয়ে আমি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারবো। আমি মেয়েটিকে বাড়ি ফিরে যেতে এবং আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে খবর দিয়েছি।’

এসএইচ-১৯/২০/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)