কর্মকর্তাকে নারী এমপির হুমকি থাপ্পড় মেরে পাবনা ছাড়া করার

মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে থাপ্পড় দিয়ে এলাকা ছাড়া করতে চাওয়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলির বিরুদ্ধে।

নারী দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ দিতে দেরি হওয়ায় সোমবার সকালে তিনি এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কানিজ আইরিন জাহান।

মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কানিজ আইরিন জাহান।

এর আগে কানিজ আইরিন ও সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলির কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ডও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, নারী দিবস উপলক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের আয়োজনে অনুষ্ঠানে সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলিকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। দাফতরিক ব্যস্ততার কারণে আমন্ত্রণপত্র দিতে একটু দেরি হয়।

সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন চিঠি কেন পাননি জানতে চেয়ে, গতকাল সকাল ১১টায় সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুন্নাহার রেখা আমাকে ফোন করেন। আমি তাকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে বলে জানাই। এ সময় সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি ফোন নিয়ে আমাকে গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে আমাকে থাপ্পড় দিয়ে পাবনা ছাড়া করবেন বলে ধমক দেন। আমাকে দুর্নীতিবাজ বলে গালি দিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে পাবনা থেকে তাড়াতে পারেন বলেও জানান তিনি।

ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, প্রথমে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুন্নাহার রেখা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে মহিলা এমপিকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়নি জানতে চান। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানালে বাসায় কেন লোক পাঠানো হয়নি বা ফোন করা হয়নি তা জানতে চান।

একপর্যায়ে, সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি ফোন কেড়ে নিয়ে বলেন, এই আপনি কী হয়েছেন? আপনি নারী হয়ে নারীদের সম্মান করেন না। আপনাকে এক থাপ্পড় মেরে পাবনা ছাড়া করব কিন্তু, বেশি স্পর্ধা হয়েছে, সব কিছু কী আপনার লিজ দেওয়া হয়েছে? মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন, আপনাকে কী করে পাবনা ছাড়া করতে হয় তার ব্যবস্থা আমি করছি। আপনাকে পাবনা ছাড়া করা মাত্র দশ মিনিটের বিষয় বলে গালিগালাজ করতে থাকেন।

কানিজ ফাতেমা আরও বলেন, আমার কাজে অনিয়ম, ভুল ত্রুটি পেলে তিনি বকা দিতে পারেন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করতে পারেন। কিন্তু থাপ্পড় দেওয়ার কথা বলতে পারেন না। আমার বাবা মাও কখনো আমাকে থাপ্পড় দেননি। অথচ নারী দিবসে আমাকে এমন একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হলো। আমি এখানে সরকারের দায়িত্ব পালন করতে এসেছি, নারী দিবসের দিনে থাপ্পড় খেতে নয়। ঘটনার পর থেকে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাদিরা ইয়াসমিন জলি এমপি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের কথা স্বীকার করেন। তবে, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে দুর্নীতি পরায়ণ, স্বেচ্ছাচারী অভিযোগ করে বলেন, মহিলা এমপি হওয়া সত্ত্বেও নারী দিবসের অনুষ্ঠানে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। নারী সমাজের প্রতিনিধিকে অপমান, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য করে তিনি সমগ্র নারী জাতির অবমাননা করেছেন।

থাপ্পড় দিতে চেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি একজন প্রোগ্রাম অফিসার, অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জেলার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জেলায় দুর্নীতির রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। আমি তাকে সংশোধন হতে বার বার বলেছি। কিন্তু তার অপকর্ম অব্যাহত রেখেছেন। গতকাল কয়েকবার ফোন দেওয়ার পরেও তিনি আমার ফোন ধরেননি। পরে অন্য ফোন রিসিভ করায় আমি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করব।

নারী দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্বে থাকা পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (স্থানীয় সরকার) মোখলেসুর রহমান বলেন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।

এসএইচ-০৪/০৮/২২ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)