নির্বাচনী সহিংসতা থামছে না রাজশাহীতে

নির্বাচনের চার দিন পরও রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ীতে থামেনি সহিংসতা। ভোটের দিন সংঘটিত সহিংসতার জেরে এখনও এসব এলাকায় প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।

এতে আতঙ্কিত বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝেও।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কার্যত নীরব ভূমিকায়। থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও পুলিশ নিচ্ছে না। আর এই সুযোগে ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেণির সশস্ত্র নেতাকর্মী বেপরোয়া হয়ে হামলা চালাচ্ছে প্রতিপক্ষের ওপর।

তবে জেলা পুলিশের দাবি, সহিংসতা সৃষ্টিকারী কয়েকজনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গোদাগাড়ী ও তানোরের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পাল্টা অভিযোগ করে বলছেন, নির্বাচনের দিন তানোরের মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে আওয়ামী লীগ নেতা মোদাচ্ছের আলী ও গোদাগাড়ীর পালপুর ধমরপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন নিহত হন। এছাড়া ভোটের দিন রাজশাহীর মোহনপুরে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা মিরাজুল ইসলাম। এরই জের ধরে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে। তবে এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জড়িত নয়।

তানোর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও তানোর পৌর মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বলেন, তিনি তানোর এলাকায় ডিশ লাইনের ব্যবসা করেন। ভোটের পর থেকে উপজেলার সর্বত্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার গজ ডিশলাইনের তার কেটে ফেলেছে।

বুধবার রাতে উপজেলার পারিশো দুর্গাপুর বাজারে ডিশলাইনের নেটওয়ার্ক অফিসের সব সরঞ্জাম লুট করে নিয়ে গেছে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। ভোটের পর থেকে প্রতি রাতেই তানোরের বিভিন্ন স্থানে তার ডিশলাইনের কেবল কেটে ফেলাসহ সঞ্চালন লাইনগুলো কেটে আগুন দেয়া হচ্ছে। ফলে শত শত কেবল গ্রাহক চার দিন ধরে কোনো স্যাটেলাইট টিভি দেখতে পারছেন না।

জানা গেছে, বুধবার তানোরের কলমা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিএনপি সমর্থক শফিকুল ইসলাম বিল্লীবাজারে জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে গেলে যুবলীগ নেতা ময়না চেয়ারম্যানের লোকজন তাকে মারধর করে এবং তার মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করে। এর আগে মঙ্গলবার বাধাইড় এলাকার বিএনপি কর্মী বকুলের বাড়ি ও গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে ফেলে একদল দুর্বৃত্ত। দু’দিনেও পল্লী বিদ্যুতের লোকজন সন্ত্রাসীদের ভয়ে বকুলের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারেনি।

এদিকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোদাগাড়ীর কুমরপুর বাজারে আওয়ামী লীগের একদল সশস্ত্র নেতাকর্মী কয়েকটি খোলা গাড়িতে এসে বদর আলী ও টিয়ার ধানের আড়ৎ, বাহাদুরের কাপড়ের দোকান, শাহীনের কীটনাশকের দোকানসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের মোট ১০টি দোকানে ভাঙচুর লুটপাট চালায়। পরে দোকানগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিসের ৩টি গাড়ি গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বুধবার দুপুরে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন ও এসপি মো. শহীদুল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঘটনার শিকার ব্যবসায়ী বাহাদুর বলেন, তার দোকান থেকে ১৬ লাখ টাকার মালামাল লুট করা হয়েছে।

প্রকাশ্যে এ সহিংসতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র এএসপি আবদুর রাজ্জাক খান বলেন, গোদাগাড়ীর ঘটনায় তিন দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে গোদাগাড়ী থানায়।

রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুল হক বলেন, ভোটের আগে প্রশাসনিক হয়রানি এবং ভোটের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেপরোয়া হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা চলছেই। ফলে গোদাগাড়ী ও তানোরের অধিকাংশ বিএনপি নেতাকর্মী জানমালের নিরাপত্তা না পেয়ে পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। নির্যাতিতরা পুলিশের কাছে গিয়েও কোনো সহায়তা পাচ্ছে না।

অভিযোগ প্রসঙ্গে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী বলেন, এসব ঘটনা দলের ভেতরের অতি উৎসাহী কিছু লোকের কাজ। এর সঙ্গে প্রকৃত আওয়ামী লীগ করেন এমন কোনো নেতাকর্মীর সম্পর্ক নেই।

বিএ-১২/০৪-০১ (নিজস্ব প্রতিবেদক)