রাজশাহীতে বিমান থেকে নামিয়ে ডিসিকে তল্লাশি

রাজশাহীতে বিমান থেকে নামিয়ে এক ডিসিকে তল্লাশি করা হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা তল্লাশি এড়িয়ে বিমানে ওঠে গিয়েছিলেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একজন উপকমিশনার (ডিসি) আবু আহাম্মদ আল মামুন।

বুধবার বিকেলে পুলিশের এই ডিসির নিরাপত্তা তল্লাশির ঘটনাকে কেন্দ্র রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (র.) বিমানবন্দরে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে।

এ নিয়ে সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে ওই সময়। পরে বৃহস্পতিবার বিষয়টি মীমাংসা করা হয়।

এদিকে সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মীদের গায়ে হাত তোলার অপরাধে সিটি এসবির কনস্টেবল জালাল উদ্দিনকে বিমানবন্দর থেকে ক্লোজড করা হয়েছে।

সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মীদের অভিযোগ, আরএমপি পুলিশের ডিসি আবু আহাম্মদ আল মামুনের নিরাপত্তা তল্লাশি সম্পন্ন করতে চাওয়ার অপরাধে বিমানবন্দরে দায়িত্বরত পুলিশের নগর বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) কনস্টেবল জালালসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য সিভিল অ্যাভিয়েশনের কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মীর গায়ে হাত তোলেন। মারামারি ও ধাক্কাধাক্কিতে এক নিরাপত্তাকর্মীর শার্ট ছিঁড়ে যায়। ওই সময় বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সেতাফুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার আরএমপির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিমানবন্দরে গিয়ে সিভিল অ্যাভিয়েশন ও বিমানবন্দর কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাজশাহী বিমানবন্দরে যান। তারা দুপক্ষকে নিয়ে মীমাংসায় বসেন। সেখানে সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মীর গায়ে হাত তোলার অপরাধে সিটিএসবির কনস্টেবল জালাল উদ্দীনকে ভর্ৎসনা করা হয়। একই সঙ্গে কনস্টেবল জালালকে সিভিল অ্যাভিয়েশনের ওই কর্মীর কাছে ক্ষমা চাওয়ানো হয়। তবে ঘটনাটি নিয়ে সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মীদের মাঝে এখনও তীব্র অসন্তোষ রয়েছে।

সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, কোনো যাত্রীকে বিমানে ওঠা পর্যন্ত যেতে হলে দুবার দেহ তল্লাশি এবং লাগেজ স্ক্যানিংয়ের মুখোমুখি হতে হয়। বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশের সময় একবার এবং ডিপার্টচার লাউঞ্জ হয়ে টার্মিনালে পৌঁছানোর সময় আরেকবার এই তল্লাশি সম্পন্ন করতে হয়। যাত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থেই এটা করা হয়ে থাকে। কিন্তু বুধবার বিকালে বিমানবন্দরে ঢুকেই ডিবি পুলিশের ডিসি আল মামুন ডিপার্টচার লাউঞ্জ না হয়ে সরাসরি ভিআইপি লাউঞ্জে চলে যান।

সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মীরা এ সময় তাকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা তল্লাশি সম্পন্ন করতে অনুরোধ করলে ডিসি মামুন নিজের পরিচয় দিয়ে তল্লাশিতে আপত্তি করেন। এরপর তিনি তল্লাশি না করিয়েই ভিআইপি লাউঞ্জ হয়ে সরাসরি ইউএস বাংলার ঢাকামুখী বিমানে গিয়ে ওঠে পড়েন।

এ সময় সিটিএসবির সদস্য জালাল উদ্দিন সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মী মাসুদ রানার গায়ে প্রথমে হাত তোলেন। এ সময় উপস্থিত পুলিশ ও সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনা দেখে সিভিল অ্যাভিয়েশনের সুপারভাইজার ও অন্য কর্মকর্তারা ছুটে গেলে পুলিশ সদস্যরা তাদেরকেও লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।

এদিকে ঘটনাটির জেরে ইউএস বাংলার ওই ফ্লাইটটিকে উড়ার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন রাজশাহী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বিমানকর্মীরা পুলিশের ডিসি মামুনকে নিয়ে যেতে অস্বীকার করলে বাধ্য হয়ে তিনি বিমান থেকে নেমে আসেন। পরে নিয়মানুযায়ী, তার নিরাপত্তা তল্লাশি সম্পন্ন হলে তিনি পুনরায় বিমানে ওঠেন। শেষে ৩০ মিনিট বিলম্বে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে রাজশাহী বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

অন্যদিকে ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে আরএমপির ডিসি আল মামুন ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

তবে সিটিএসবির কনস্টেবল জালাল উদ্দিন বলেন, আমি একটি সভায় দায়িত্বপালনে আছি। তাই কথা বলতে পারব না। তবে বিমানবন্দরে কিছু ঘটেনি বলে তিনি দাবি করেন।

আর ঘটনাটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সেতাফুর রহমান।

তবে আরএমপির মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম বলেন, ঘটনাটি আমরা জানি। ভুল বোঝাবোঝির কারণে এমন হয়েছিল।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ডিপার্টচার লাউঞ্জে দ্বিতীয়বার তল্লাশি করা হয় এটা ডিসি মামুন স্যার জানতেন না। তিনি খুবই শেষ সময়ে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। ফ্লাইংয়ের দুই-চার মিনিট আগে। তাই তিনি তল্লাশি না করিয়েই যেতে চাইছিলেন।

ইফতেখায়ের আলম জানান, ঘটনাটি জানার পর সকালে তিনি নিজেই বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে আরএমপির শাহ মখদুম জোনের ডিসি সুজায়েত ইসলামও ছিলেন। তারা দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলেন। সেখানে কনস্টেবল জালাল উদ্দিনকে দিয়ে ওই নিরাপত্তাকর্মীর হাত ধরিয়ে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছে। এরপর তার সঙ্গে সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্মীদের কোলাকোলি করানো হয়েছে।

এদিকে বুধবারের এই অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে রাজশাহী বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা ঢাকায় সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তাপ্রধানকে প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিএ-২১/০৪-০৪ (নিজস্ব প্রতিবেদক)