প্রিয় নবী (সা.) দেখতে কেমন ছিলেন?

প্রিয় নবী

মুফতি মুহাম্মাদ এহছানুল হক মোজাদ্দেদী: মুমিন হৃদয়ের একান্ত আশা, যদি সবকিছুর বিনিময়ে হলেও প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জীবনে একনজর দেখতে পেতাম! ‘যে নবীকে (ইমানের চোখে) একবার দেখবেন তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।’ তিরমিজি। প্রিয় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র আকার-আকৃতি অনেক সাহাবি থেকে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আলী (রা.) যখনই রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহের বর্ণনা দিতেন তখন বলতেন, তিনি অত্যধিক লম্বাও ছিলেন না এবং একেবারে বেঁটেও ছিলেন না; বরং ছিলেন মধ্যমাকৃতির। তাঁর মাথায় চুল একেবারে কোঁকড়ানো ছিল না এবং সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না; বরং মধ্যম ধরনের কোঁকড়ানো ছিল। তিনি অতি স্থূলদেহী ছিলেন না এবং তাঁর চেহারা একেবারে গোল ছিল না; বরং লম্বাটে গোল ছিল। গায়ের রং ছিল লাল-সাদা মিশ্রিত। চোখের বর্ণ ছিল কালো এবং পলক ছিল লম্বা ও চিকন। হাড়ের জোড়াগুলো ছিল মোটা। পুরো দেহ ছিল পশমহীন, অবশ্য পশমের চিকন একটি রেখা বুক থেকে নাভি পর্যন্ত লম্বা ছিল। দুই হাত ও দুই পায়ের তালু ছিল গোশতে পরিপূর্ণ। যখন তিনি হাঁটতেন তখন পা পূর্ণভাবে উঠিয়ে মাটিতে রাখতেন, যেন তিনি কোনো উঁচু জায়গা থেকে নিচের দিকে নামছেন। যখন তিনি কোনো দিকে তাকাতেন তখন ঘাড় পুরোপুরি ঘুরিয়ে তাকাতেন। তাঁর উভয় কাঁধের মাঝখানে ছিল মোহরে নবুয়ত বা নবী হওয়ার অলৌকিক নিদর্শন। তিনি হলেন সর্বশেষ নবী। তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে অধিক দানশীল, সবচেয়ে বেশি সত্যভাষী। তিনি ছিলেন সবচেয়ে কোমল স্বভাবের এবং বংশের দিক থেকে সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদার অধিকারী। যে ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ দেখত, সে ভয় পেত (গুরুগম্ভীরতার কারণে)। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পরিচিত হয়ে তাঁর সঙ্গে মিশত, সে তাঁকে অনেক ভালোবেসে ফেলত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলি বর্ণনাকারী এ কথা বলতে বাধ্য হন যে, ‘আমি তাঁর আগে ও পরে তাঁর মতো কাউকে কখনো দেখতে পাইনি।’ তিরমিজি।

হজরত হাসান বিন আলী বলেন, ‘আমার মামা হিন্দ বিন আবু হালা (রা.)-কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবয়ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তিনি তাঁর পুরো দেহের বর্ণনা দেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, তাঁর কপাল ছিল বেশ উন্নত। ভুরু ছিল সরু ও ঘন পাপড়িবিশিষ্ট। দুই ভুরু আলাদা ছিল। মাঝখানে একটি রগ ছিল। তিনি যখন রাগ হতেন, তখন তা ভেসে উঠত। নাক খাড়া ছিল। ভালোভাবে না দেখলে মনে হতো তিনি প্রকাণ্ড নাকবিশিষ্ট। নাক থেকে এক ধরনের নূর চমকাত।’ তিরমিজি।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেট সম্পর্কে হিন্দ বিন আবু হালা বলেন, ‘তাঁর পেট ও বুক সমান ছিল।’ তিরমিজি। কেউ কেউ বলছেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহ সিক্সপ্যাক ছিল। এ বর্ণনা থেকে স্পষ্ট জানা যায়, তাঁর বুক বা পেটের কোনো অংশ সিক্সপ্যাক ছিল না। এ কথা তো সবাই জানে, সিক্সপ্যাক দেহধারীর বুক ও পেট কখনো সমান হয় না।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকৃতি সম্পর্কে হজরত জাবির ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, ‘একবার আমি চাঁদনি রাতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম। অতঃপর একবার তাঁর দিকে তাকালাম আর একবার চাঁদের দিকে তাকালাম। তখন তিনি লাল বর্ণের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। তাঁকে আমার কাছে চাঁদের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর মনে হলো।’ তিরমিজি, দারেমি। হজরত কাব ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো ব্যাপারে আনন্দিত হতেন তখন তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠত। মনে হতো যেন তাঁর মুখমণ্ডল চাঁদের টুকরা।’ বুখারি, মুসলিম। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনের দাঁত দুটির মাঝে কিছুটা ফাঁক ছিল। যখন তিনি কথাবার্তা বলতেন, তখন মনে হতো ওই দাঁত দুটির মধ্য দিয়ে যেন নূর বিচ্ছুরিত হচ্ছে।’ দারেমি। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বেশি সুন্দর কাউকে আমি কখনো দেখিনি। মনে হতো যেন সূর্য তাঁর মুখমণ্ডলে ভাসছে। আর তিনি অপেক্ষা চলার মধ্যে দ্রুতগতিসম্পন্ন কাউকে দেখিনি। তাঁর চলার সময় মনে হতো মাটি যেন তাঁর জন্য সংকুচিত হয়ে এসেছে। আমরা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলতাম। অথচ তিনি স্বাভাবিক নিয়মে চলতেন।’ তিরমিজি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে দিদারে রসুল ও জিয়ারতে বায়তুল্লাহ নসিব করুন।

আরএম-০১/০৫/০৪ (ধর্ম ডেস্ক)