আসামি ছিনতাই করায় বিএনপির চাঁদসহ ২২ জনের নামে মামলা

বিএনপির একটি অনুষ্ঠানে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রাজশাহী জেলা বিএপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ ও বাঘা পৌরসভার মেয়র আব্দুর রাজ্জাকসহ ২২ নেতাকর্মীর নামে বাঘা থানায় মামলা হয়েছে। এই মামলায় বাঘা উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাতেই পুলিশ মামলা করেছে।

তবে পুলিশ বলছে, তারা অনুষ্ঠানে নয়, রাস্তায় আসামি ধরেছিলেন। কেউ আসামি ছিনিয়ে নেয়নি। পাঞ্জাবি ছিঁড়ে আসামি নিজেই পুলিশের হাত থেকে ছুটে পালিয়েছে। আর বিএনপি দাবি করছে, তারা আসামি ছিনিয়ে নেননি। তাদের অনুষ্ঠানও পণ্ড হয়নি। পুলিশের ‘মুভমেন্টের’ কারণে তারা অনুষ্ঠান শেষ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

এই আসামির নাম শামীম সরকার। তার বাড়ি বাঘা উপজেলার সরেরহাট গ্রামে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শামীম সরকার জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। পুলিশ বলছে , তার নামে ২০১৮ সালের একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তিনি একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বাইরে কোথাও অনুষ্ঠানের আয়োজন করার অনুমতি না পেয়ে বাঘা পৌর বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেনের বাড়ির সামনেই গত মঙ্গলবার বাঘা উপজেলা ও পৌর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে একটি বর্ধিতসভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছিলেন বাঘা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। বেলা ১২টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত হন। এই অনুষ্ঠান চলাকালে বাঘা থানার উপপরিদর্শক সইবুর রহমান কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থল থেকে শামীম সরকারকে গ্রেপ্তার করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের হাত থেকে শামীমকে ছিনিয়ে নেন। এ নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিএনপি নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠান শেষ করে দিতে বাধ্য হন। নেতাকর্মীরা বিভিন্ন দিক দিয়ে অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন।

ঘটনার পরপরই মুঠোফোনে যোগাযোগ করা কামাল হোসেন বলেছিলেন, পুলিশ কাকে গ্রেপ্তার করেছে তারা তাকে চেনে না। বিএনপির নেতাকর্মীরাও ওই তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়নি।

এ ব্যাপারে এসআই সইবুর বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০/২৫জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বাঘা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া বাঘা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি নূরুজ্জামান খান, বাঘা পৌর বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক তফি (তোফাজ্জল হোসেন), সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুরুজ্জামান, বাঘা থানা যুবদলের আহবায়ক আব্দুস সালাম, বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকরুল হাসান, গড়গড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকেও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ ঘটনার পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেছিলেন ‘তারা উপজেলার বিএনপি থেকে তিনজন নেতার নাম পেয়েছেন। ওই তিনজনের ভেতর থেকেই সিনিয়র-জুনিয়র দেখে একজনকে আহবায়ক, একজনকে যুগ্ম আহবায়ক ও একজনকে সদস্যসচিব করা হবে। এই নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে এমন সময় পুলিশ সভার মধ্যে থেকে ওয়ারেন্টের একজন আসামি ধরে।

এ নিয়ে পুলিশের একটি ‘মুভমেন্টের’ কারণে সবাই বলল, আপনারা চলে যান। পুলিশ তাকে বলেছে, আপনাকে ২০ মিনিটের মধ্যে সভা শেষ করে দিতে হবে। তারা চলে এসেছেন। মামলা হওয়ার পরে গতকাল বুধবার তার ফোনে চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ওই আসামির নামে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা রয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। সে পাঞ্জাবি ছিঁড়ে পুলিশের হাত গলিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি দাবি করেন ওই আসামিকে বিএনপির অনুষ্ঠান থেকে ধরা হয়নি। পুলিশ রাস্তা থেকে তাঁকে ধরেছিল।

মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে কথা বলার জন্য বারবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। থানায় লোক পাঠিয়ে জানা গেছে, তিনি বাসায় ঘুমোচ্ছেন।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ বলেছেন, এ ব্যাপারে ছোটখাটো একটা মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে পরে তিনি বিস্তারিত কথা বলতে চান।

বিএ-১৭/০৩-০৯ (নিজস্ব প্রতিবেদক)