ত্রাণের ব্যাগে এমপি ফারুকের ছবি!

ত্রাণের ব্যাগে ব্যক্তিগত কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। মুজিববর্ষের লোগো এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতি নিতে হবে। কারও ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করলেও দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে।

জেলা প্রশাসনের এ ধরনের নির্দেশনা তোয়াক্কা না করেই রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ত্রাণের ব্যাগে নিজের ছবি ব্যবহার করেছেন।

এ দুই উপজেলায় যে সব ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে সেই ব্যাগে বড় করে আছে তার ছবি। ওপরে ছোট করে রয়েছে মুজিববর্ষের লোগো ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি।

তানোরে ত্রাণ বিতরণের জন্য গত শনিবার সভা করে উপজেলা প্রশাসন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। সে সভায় তিনি সিদ্ধান্ত দেন, যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে সেই ত্রাণের ব্যাগে তার ছবি থাকবে। ওপরে কোণায় ছোট করে থাকবে মুজিববর্ষের লোগো ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি।

সভায় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের কাছে ত্রাণের জন্য প্রকাশ্যে চাঁদাও দাবি করেন। চাঁদার টাকা কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের তানোর শাখার একটি হিসাবে (হিসাব নং-৬১৯) জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।

হিসাবটি এমপির ঘনিষ্ঠ রাজশাহী মহানগর বোয়ালিয়া থানা (পশ্চিম) আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল বাশার সুজনের নামে খোলা। গণমাধ্যমে এ সব বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়।

বিষয়টি নিয়ে সোমবার জেলা প্রশাসক হামিদুল হক রাজশাহীর সব ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের একটি চিঠি দেন।

এতে প্রকাশিত সংবাদটির সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়, ত্রাণের ব্যাগে কারও ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করতে হলে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। মুজিববর্ষের লোগো এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করতে হলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। এ ছাড়া খাদ্যসামগ্রী জমায়েত করে বিতরণ না করতেও বলা হয়।

চিঠিতে বলা হয়,বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে। তবে এই নির্দেশনা না মেনে মঙ্গলবার তানোরের তালন্দ, পাঁচন্দর, বাঁধাইড় ও কলমা ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) মানুষকে জমায়েত করে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

এ সব অনুষ্ঠানে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। এ সব স্থান থেকে বিতরণ করা ত্রাণের ব্যাগেও এমপি ফারুকের ছবি ছিল। অথচ ছবি ব্যবহারের কোনো অনুমতিই নেয়নি কেউ।

তানোরের ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, ত্রাণের ব্যাগে ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দিয়ে জেলা প্রশাসক যে চিঠি দিয়েছেন সেটি তিনি পেয়েছেন। এরপর সব ইউপির চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের বলা হয়েছে, তারা যেন ছবি সংবলিত কোনো ব্যাগ ব্যবহার না করেন।

কিন্তু মঙ্গলবারও এ সব ব্যাগ ব্যবহারের বিষয়টি তার জানা নেই। কেউ এই ব্যাগ ব্যবহার করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি রাজশাহী জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হবে।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, অনুমোদন ছাড়া কেউ ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করতে পারবেন না। সেটি চিঠি দিয়ে সবাইকে জানানো হয়েছে। এরপরও তানোরে এই ব্যাগ ব্যবহার হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি দেখব।

বিএ-১৭/০৭-০৪ (নিজস্ব প্রতিবেদক)