সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া করোনা যুদ্ধে নামলেন রাজশাহীর চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা

রাজশাহী অঞ্চলে চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ভরসা কেবল মাস্ক। পাশাপাশি নিজেদের সংগ্রহ করা হ্যান্ড গ্লাভস নিয়ে করোনা যুদ্ধে মাঠে নেমেছেন কোনো কোনো স্বাস্থ্যকর্মী। পিপিই মিলেছে হাতেগোনা। ফলে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই মাঠে নেমেছেন তারা।

ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই মাঠে শঙ্কিত মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ের চিকিৎসায় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের প্রক্রিয়া চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীর আট জেলায় উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে ৬৭টি। এছাড়া রয়েছে ৫৬৪টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং এক হাজার ৯৭৪ কমিউনিটি ক্লিনিক। আট উপজেলায় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে ১৯টি। বিভাগে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে ৩৯৩টি। এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে ৩১০টি। বিভাগের তিন হাজার ৯৪৫টি স্যাটেলাইট ক্লিনিকেও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেবা দেয়া হয়। স্বাস্থ্যসেবা দানকারী এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নেই ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম।

ফলে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে কেবল মাস্ক পরেই সেবা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করছেন। চিকিৎসকদের কয়েকজন পিপিই পেলেও অনেকেই পিপিই ছাড়াই সেবা দিচ্ছেন।

প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ভরসা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। করোনা পরিস্থিতিতে এখানে সেবাগ্রহীতা দ্বিগুণ। কিন্তু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই সেবা দিচ্ছেন কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে হ্যান্ড গ্লাভস সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু পিপিই পাননি কেউ।

এ অবস্থায় করোনা ঝুঁকি এড়াতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন প্রোভাইডাররা। সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়ার পর স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন রোগীরা। রাজশাহীর বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে এসব চিত্র।

রাজশাহীর পবা উপজেলার দর্শনপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রোভাইডার ইসরাফিল হোসেন বলেন, আগে দিনে ৪০-৫০ জন সেবাগ্রহীতা আসতেন। এখন আসছেন ৮০-১০০ জন। এদের বেশির ভাগই জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে আসছেন। শুধুমাত্র মাস্ক পরেই এসব রোগীর সেবা দিচ্ছি। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পাইনি। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে শঙ্কিত আমি।

একই কথা জানালেন উপজেলা সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও কুখন্ডি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আক্তারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, উপজেলার ৩০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপিদের জন্য কেবল ৩০টা মাস্ক দিয়েছেন সিভিল সার্জন। তবে সেগুলো সার্জিক্যাল মাস্ক নয়, কাপড়ের তৈরি সাধারণ মাস্ক। অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে হ্যান্ড গ্লাভস সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু কেউই পিপিই পাননি। জীবনের ঝুঁকি সেবা দিচ্ছি আমরা।

উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপজেলা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে হাতেগোনা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক ছাড়াও ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং স্যাটেলাইট ক্লিনিকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেয়া হয়নি। এদের ভরসা কেবল মাস্ক।

বিষয়টি স্বীকার করে পরিবার পরিকল্পনা দফতরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সেবাকেন্দ্রগুলোতে মূলত মা ও শিশুরা আসেন। এখানে করোনা আক্রান্তদের আসার সুযোগ কম। তবুও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পর্যায়ক্রমে পাঠানো হচ্ছে। কেউ কেউ পেয়েছেন। তবে শতভাগ দেয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে সরবরাহের চেষ্টা চলছে।

জানতে চাইলে রাজশাহী স্বাস্থ্য দফতরের পরিচালক ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য বলেন, স্বাস্থ্য দফতরের মাঠপর্যায়ে কর্মরতদের নির্দেশনা দেয়া আছে। যারা ফ্রন্ট লাইনে থেকে সেবা দেবেন তাদের পিপিই দেয়া হয়েছে, হচ্ছে। তবে কেউ কেউ পাননি। তাদের জন্য সরবরাহ হচ্ছে, এটা চলমান প্রক্রিয়া।

তিনি আরও বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে পিপিই দরকার নেই। কারণ এখানে রোগীর অবস্থা শোনার পর সেবা দেয়া হয়। তাদের মাস্ক হলেই চলবে। পাশাপাশি দূরত্ব বজায় রেখে সেবা দেবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

বিএ-০৫/০৯-০৪ (নিজস্ব প্রতিবেদক)