প্রেম নিয়ে বিরোধে বোনকে হত্যা, আট মাস পর রহস্য উদ্‌ঘাটন

পরিবারের লোকজন জানায় তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে খবরে বাড়ির পাশের বাগানের একটি গাছের সঙ্গে ঝুলতে থাকা মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত করে পুলিশ। এরপর করা হয় অপমৃত্যু মামলা।

অবশ্য আট মাস আগের সেই মৃত্যুর ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সম্প্রতি পুলিশ জানতে পারে আত্মহত্যা নয়, সেটি ছিল হত্যাকাণ্ড।

পরে পুলিশি অভিযানে গ্রেফতারের পর নিহতের ভাই স্বীকার করেছে যে, বোনের প্রেম নিয়ে বিরোধে তাকে হত্যা করেছে সে নিজেই। রাজশাহীর পুঠিয়ায় এমন ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসীর বরাতে পুলিশ জানায়, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা সদরের ২০ বছর বয়সী প্রান্তি গত বছর পরিবারের অমতে ঘর ছাড়েন। একই উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে জিয়ারুল ইসলামকে বিয়ে করেন। সেখানে বনিবনা না হওয়ায় বছর না ঘুরতেই তাদের দাম্পত্যজীবনের ইতি ঘটে।

এদিকে পরিবারের অমতে বিয়ে করায় নিজ পরিবারেও ঠাঁই হয়নি প্রান্তির। অগত্যা বিভিন্ন আত্মীয়র বাড়িতে ঘুরে ঘুরে দিন পার করতেন তিনি। এতে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন প্রান্তি। চলতি বছরের ৫ মার্চ রাতে নিজেদের বাড়ির পাশে দাদির বাড়িতে আসেন তিনি। পরদিন বাড়ির পাশের বাগানের একটি গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের লোকজন সে সময় দাবি করেছিলেন, জীবনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে প্রান্তি আত্মহত্যা করেছেন।

সে সময় পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পুঠিয়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়। সম্প্রতি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পায় পুলিশ। প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা জানান, এটি আত্মহত্যা নয়। প্রান্তিকে হত্যা করে তারপর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিবেদন পেয়ে মাঠে নামে পুলিশ। বুধবার সকালে প্রান্তির বাবা হাসানুজ্জামান বাবু, মা নাসরিন বেগম ও ভাই নাসিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে নাসিম স্বীকার করে, সে বোনের প্রেম মানতে না পেরে দাদির বাড়িতে গিয়ে তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওই রাতে মারধর করে। একপর্যায়ে বোনকে ধাক্কা দিলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দেয়ালে মাথায় আঘাত পায়। এবং সেখানেই মারা যায়। এরপর ওই হত্যাকে আত্মহত্যা সাজাতে বাড়ির পাশের গাছের সঙ্গে তার মরদেহ ঝুলিয়ে দেয়া হয়।

পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ‘প্রান্তির মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। পাশাপাশি এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের হাতে এলে জানতে পারি প্রান্তিকে হত্যা করা হয়েছে। সেই সূত্র ধরে তদন্ত শুরু। সকালে নিহতের ভাই নাসিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। হত্যার দায়ে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে।’

এসএইচ-২৩/০৯/২২ (নিজস্ব প্রতিবেদক)