স্কুল ড্রেস না পরায় প্রধান শিক্ষকের নির্মমতা

বাবা মহিনুর রহমান ইটভাটার শ্রমিক। ছেলে মেহেদী হাসান সাগরকে (১৫) শিক্ষিত করার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি করান যশোরের শার্শা সরকারি মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। মেহেদী হাসান বেনাপোল পোর্ট থানার কাগজপুকুর গ্রামের বাসিন্দা ও ওই স্কুলের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র।

শিক্ষকরা মেহেদীকে স্কুল ড্রেস বানানোর জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দেন। অভাবের সংসারে অনেক কষ্টে ছেলেকে স্কুল ড্রেসের জন্য একটি শার্ট বানিয়ে দেন বাবা।

সাত দিনের দু’দিন যেতে না যেতেই সোমবার সকালে স্কুল ড্রেসের শার্ট পরে স্কুলে যাওয়ার কারণে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ক্লাস রুম থেকে ডেকে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেন মেহেদী হাসানকে। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেন স্বজনেরা।

এর আগেও অনেক ছাত্রকে এভাবে মারধরের অভিযোগ রয়েছে এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের বাবা মহিনুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ড্রেস বানানোর মতো অর্থ হাতে না থাকলেও স্কুল ড্রেস বানাতে সাত দিনের সময় দেন স্যাররা। এর মধ্যে আমি একটি শার্ট বানিয়ে দেই। দুই দিন যেতে না যেতেই সোমবার সকালে শার্ট পরে ছেলে স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক মারধর করে। খবর পেয়ে আমি স্কুলে গিয়ে আহত ছেলেকে নিয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডলের কাছে যাই। ছেলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান তিনি। ইউএনও স্যার প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন। পরে আমরা ছেলেকে শার্শা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি।

প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানকে মারধরের কথা স্বীকার করে বলেন, যা করেছি তার মঙ্গল ও ভালোর জন্য করেছি। এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।

ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, এ ধরনের শিক্ষকদের অমানবিক নির্যাতনের কারণে অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল বিমুখ হয়ে পড়ছে। এর আগেও তিনি এরকম অনেক ঘটনা ঘটিয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়মের কারণে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জেল পর্যন্ত খেটেছেন। তারপরও ক্ষমতাসীন দলের একটি মহলের কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পান না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট এলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিএ-২১/০৫-০২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)