পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রীর গায়ে আগুন, অধ্যক্ষ বরখাস্ত

পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রোববার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিকেএম এনামুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

জেলা প্রশাসক পিকেএম এনামুল করিম বলেন, শনিবার পরীক্ষা কেন্দ্রে ওই মাদরাসার শিক্ষার্থীর (১৮) গায়ে আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জরুরি সভায় বসেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। সভায় অধ্যক্ষকে গ্রেফতারের দিন থেকে সাময়িক বরখাস্ত, অগ্নিদগ্ধ শিক্ষার্থীকে সহযোগিতার জন্য মাদরাসা তহবিল এবং শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা অনুদান, দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার এবং আদালতে সোপর্দ করার জন্য মাদরাসার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা, মাদরাসায় নিরাপত্তার জন্য দ্রুত ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন, মাদরাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান ও কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে সোনাগাজীর ওই মাদরাসাসহ গোটা উপজেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আতঙ্কে রয়েছেন। শনিবার বিকেলে মাদরাসার হোস্টেল থেকে শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে গেছে। মাদরাসা ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি) মোহাম্মদ আবুল ফজল। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কিছু তথ্য পেয়েছি আমরা। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি, আশা করছি আরও কিছু তথ্য পাব, তখন একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারব।

এর আগে পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। পুরো তদন্ত শেষ হওয়ার পরই প্রকৃত কারণ জানা যাবে। ঘটনাস্থল থেকে পলিথিনজাতীয় কিছু পাওয়া গেছে। ধারণা হচ্ছে, ওই পলিথিনের ভেতরেই কেরোসিন ছিল।

আহত মাদরাসা ছাত্রীর বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘আমার বোনের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই আমরা।’

শনিবার সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান ওই ছাত্রী। মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবীকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে ভবনের চারতলায় যান তিনি। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচ ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

এর আগে গত ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেছেন।

বিএ-১৭/০৭-০৪ (আঞ্চলিক ডেস্ক)