দাদির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেনে সেই নুসরাত

অধ্যক্ষের যৌন নিপীড়নের বিচার চেয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার শিকার মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাদির কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির নামাজের জানাজা ফেনীর সোনাগাজী মো. সাবের সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে নামাজের জানাজা পড়ান নুসরাতের বাবা মাওলানা মুসা।

এদিন বিকেলে নুসরাতের গ্রামের বাড়িতে লাশ পোঁছানোর পের সন্ধ্যা ৬টার দিকে নুসরাতের জানাজা শেষ হয়। জানাযাতে উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার মানুষ। লাশ পৌঁছানের পরে নুসরাতের বাড়িতে মানুষের ঢল নামে। এদিন শোক স্তব্ধ ছিল নুসরাতের বাড়ির উঠানটি। উপস্থিত মানুষের চোখে-মুখে ছিল শোকের ছায়া।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বেলা সোয়া ১২টার দিকে ঢামেক হাসপাতাল থেকে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা করে। সঙ্গে নুসরাতের মা-বাবা ও ভাইয়েরা ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত শনিবার সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি নামের ওই ছাত্রী। মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে রাফি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান।

সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচ ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে নুসরাতের শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে যায়। বর্তমানে ওই মাদরাসাছাত্রীকে ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

এর আগে গত ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

এ ঘটনায় রোববার থেকে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাদরাসার স্বাভাবিক কার্যক্রম ও অনির্দিষ্টকালের জন্য হোস্টেল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে মাদরাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা হয়। সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকালে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি করেন ভিকটিমের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান। মামলার সংশোধিত এজাহারে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া মুখোশধারী চারজন এবং তাদের সহযোগীদের আসামি করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত মোট নয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বিএ-১৫/১১-০৪ (আঞ্চলিক ডেস্ক)