মেডিকেলে রোগী দেখেন ডাক্তারের অফিস সহকারী

২০১৮ সালের শুরুর দিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যোগ দেন শরিফুল ইসলাম। হাসপাতালটির নাক, কান ও গলা (ইএনটি) বিভাগের চিকিৎসক ডা. নারায়ণ প্রসাদ শ্যান্যালের অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করছেন তিনি।

ডাক্তার না থাকলেই ডাক্তারের চেয়ারে বসেন শরিফুল ইসলাম। ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে রোগী এলেই চিকিৎসা দেন, এরপর দাবি করেন চা-মিষ্টি খাওয়ার টাকা।

শনিবার দুপুরে শিশু ছেলে সালমান রোহানীকে (৪) নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান শহরের পলাশপোল এলাকার নুর ইসলামের ছেলে হাবিবুল্লাহ্ হাবিব। সেখানে ডাক্তার না থাকলেও ডাক্তারের চেয়ারে বসেছিলেন শরিফুল ইসলাম। তাকে ডাক্তার মনে করেন হাবিবুল্লাহ্ হাবিব।

হাবিবুল্লাহ্ হাবিব বলেন, খেলতে গিয়ে অসাবধানতাবশত আমার ছেলে সালমান রোহানী নাকের মধ্যে পাথর ঢুকে যায়। এরপর হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের চিকিৎসক নারায়ণ প্রসাদ শ্যান্যালের কাছে যাই। সেখানে যাওয়ার পর শরিফুল ইসলাম আমার ছেলেকে দেখেন ও নাকের মধ্যে থাকা পাথর বের করেন। এরপর মিষ্টি ও চা খাওয়ার জন্য টাকা দাবি করেন। আমি একশ টাকা বের করে দেই।

এতে তিনি আমার উপর ক্ষেপে হন। তিনি বলতে থাকেন, আপনি অন্য কোথা থেকে কাজটা করালে বিল হত দুই হাজার টাকা। একশ টাকা আপনি কীভাবে দেন। আপনি কিছু চা-মিষ্টি খাওয়ার টাকা দিয়ে যান।

টাকা দিতে না পারার একপর্যায়ে হঠাৎ মেডিকেল লাগোয়া দারুল হাদিছ আহমাদিয়াহ সালাফিয়াহ ও এতিম খানা মাদরাসার শিক্ষক অহিদুল ইসলাম আমাকে বলেন, চিকিৎসা নিছিস টাকা দিবি না কেন। কাজ উদ্ধার হয়ে গেলে মনে থাকে না। এ সময় আমি বলি, আপনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন কেন? এই প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে শরিফুল ইসলাম ও মাদরাসা শিক্ষক একত্রে আমাকে মারতে উদ্যত হয়ে বলেন, এখুনি এখান থেকে বেরিয়ে যা, না হলে তোর পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে যাবে।

ভুক্তভোগী হাবিুল্লাহ্ হাবিব আরও বলেন, আমি জানতাম না শরিফুল ইসলাম কোনো ডাক্তার নয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি শরিফুল ইসলাম সেখানে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করেন। অথচ তার দাপটে রোগীরা অস্থির। পুরো ঘটনাটি আমি ভিডিও করে রেখেছি।

এদিকে রোগী দেখে টাকা দাবি ও মারপিট করতে উদ্যত হওয়ার বিষয়ে ডাক্তারের সহকারী শরিফুল ইসলাম বলেন, টাকা দাবি বা মারতে উদ্যত হওয়ার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি।

অন্যদিকে দারুল হাদিছ আহমাদিয়াহ সালাফিয়াহ ও এতিম খানা মাদরাসার শিক্ষক অহিদুল ইসলাম বলেন, ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। আমি না জেনে-শুনে এভাবে কথা বলেছিলাম।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাক, কান ও গলা বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. নারায়ণ প্রসাদ শ্যান্যাল বলেন, ঘটনার দিন আমি হাসপাতালে ছিলাম। বিষয়টা আমাকে কেউ জানায়নি। আসলে ঘটনাটি দুঃখজনক।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শাহাজান আলী বলেন, শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আগেও বহুবার এমন অভিযোগ শুনেছি। কিন্তু ইএনটি বিভাগের ডাক্তারদের বিরোধিতার কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এবার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ হাতে থাকায় পরবর্তী বোর্ড মিটিংয়ে শরিফুলের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিএ-১০/২২-০৪ (আঞ্চলিক ডেস্ক)