নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলায় যে কোনো সময় চার্জশিট দেওয়া হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শিগগির চার্জশিটটি আদালতে জমা দেবে। দুদকের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০১৬ সালের ১ আগস্ট ঢাকার রমনা থানায় মামলাটি করেন দুদকের উপপরিচালক (বর্তমানে পরিচালক) জুলফিকার আলী। তিনি ও সহকারী পরিচালক শফিউল্লাহ মামলার তদন্ত করেন। ওই মামলায় একই দিন নূর হোসেনের স্ত্রী রুমা আক্তারকে গ্রেফতার করেছিল দুদকের একটি টিম।
দুদকের তদন্তে নূর হোসেনের ৩ কোটি ৮৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। তবে মাত্র ১ কোটি ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬ টাকার উৎস পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনি ২ কোটি ৮১ লাখ ১১ হাজার ৮১৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া ২ কোটি ৪৫ লাখ ৪ হাজার ১৭২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে ২০১৪ সালের ১৯ মে অনুসন্ধান শুরু করার পর নামে-বেনামে প্রায় ৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর যাবতীয় সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ দেয় সংস্থাটি। একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-২ এর জেল সুপারের মাধ্যমে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন নূর হোসেন। তবে তার দাখিল করা ওই সম্পদ বিবরণীতে মাত্র এক কোটি ৭৮ লাখ টাকার সম্পদের হিসাব দেখানো হয়।
এরপর ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপপরিচালক জুলফিকার আলী ও সহকারী পরিচালক শফিউল্লাহর নেতৃত্বে একটি টিম নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নূর হোসেন, তার স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনের সম্পদের খোঁজখবর নেয়। তারা সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে নূর হোসেনের মালিকানাধীন বাড়ি, হাজী বদরউদ্দিন মার্কেট, শিমরাইল টেকপাড়ার বাড়ি, নয়াআটির রসুলবাগে স্ত্রীর নামে করা বাড়ি, মুক্তিনগর কিসমত মার্কেট এলাকায় তার বড় ভাই নূর ছালামের বাড়ি, রসুলবাগ এলাকায় তার ছোট ভাই বিএনপি নেতা মিয়া মোহাম্মদ নূর উদ্দিনের বাড়ি ও নূর হোসেনের মালিকানাধীন পরিত্যক্ত এবিএস পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন সম্পত্তি পরিদর্শন করা হয়।
নূর হোসেনের মালিকানায় রাজধানীর গুলশান-২-এ রয়েছে ২টি ফ্ল্যাট। গুলশান লেকের বিপরীত দিকে ৩৬০০ স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাট দুটিতে বসবাস করতেন তিনি। এ ছাড়া বনানী ও ধানমণ্ডিতে আরও ২টি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। এ ছাড়া স্থানীয়দের দাবি, অন্তত ৫০ বিঘা জমির মালিক নূর হোসেন। এর মধ্যে বেশ কিছু সরকারি সম্পত্তিও রয়েছে।
অনেককেই অস্ত্রের মুখে কম দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করতেন নূর হোসেন। ডেমরা কলেজ-সংলগ্ন আফজাল ডকইয়ার্ডে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি জাহাজ তৈরির অর্ডার দিয়েছিলেন নূর হোসেন। দুটি ছিল তার ভাইয়ের নামে ও অপর দুটি ছিল তার সহযোগী মতিনের নামে।
আফজাল ডকইয়ার্ডের মালিক আফজাল হোসেন জানান, ৩ মাস আগে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি জাহাজ নির্মাণের অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি ছিল নূর হোসেনের এক সহোদরের নামে। অপর দুটি ছিল কুতুবপুরের মতিনের নামে। এর মধ্যে চারটি জাহাজের নির্মাণকাজ দুই-তৃতীয়াংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিএ-১৮/০৪-০৫ (আঞ্চলিক ডেস্ক)