শাহীনের সেই ভ্যানটি উদ্ধার, ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা হয় আগের রাতে

সাতক্ষীরায় রড দিয়ে মাথা রক্তাক্ত করে শিশু শাহিনের ব্যাটারিচালিত ভ্যান ছিনতাই করার ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার সকালে যশোরের কেশবপুর উপজেলার বাজিতপুর গ্রাম থেকে ঘটনার মূল আসামি নাইমুল ইসলাম নাইমকে আটক করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বিকেলে ভ্যানটির ক্রেতা ও ভ্যানের ব্যাটারি ক্রেতাকে আটক করে পুলিশ।

মামলার প্রধান অভিযুক্ত নাইমুল ইসলাম নাইম (২৪) কেশবপুর উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের বাবর আলী মোড়লের ছেলে। ভ্যান ক্রেতা আরশাদ পাড় অরফে নুনু মিস্ত্রি (৬৫) সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার আলাইপুর গ্রামের মৃত ধোলাই পাড়ের ছেল। ভ্যানটির চারটি ব্যাটারি ক্রেতা বাকের আলী (৪৫) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোবিন্দকাটি গ্রামের মৃত হামজের আলীর ছেলে।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান জানান, শিশু শাহীনের ওপর নৃশংস ঘটনাটি সাতক্ষীরা ও যশোর জেলা পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছে। টানা ৭২ ঘণ্টা পুলিশ ঘটনার রহস্য উৎঘাটন ও ভ্যানটি উদ্ধারে একযোগে কাজ করেছে।

ঘটনার বিবরণ জানিয়ে তিনি বলেন, গত ২৭ জুন প্রধান অভিযুক্ত নাইমুলসহ তিনজন গোপনে মিটিং করে। নাইমুলের মোবাইল থেকে শাহীনকে ফোন দিয়ে বলে যে, শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একটা ভাড়া রয়েছে। তুই সকালে কেশবপুর বাজারে চলে আসিস। একই সঙ্গে তারা ৩৫০ টাকা ভাড়া ঠিক করে।

পরের দিন শুক্রবার সকালে নাইমের ফোন থেকে সকালে ফোন করে শাহীনকে কেশবপুর বাজারে আসতে বলে। শাহীন কেশবপুর বাজারে এসে দেখে নাইমুলসহ তিনজন গাজীরমোড়ে বসে আছে। পরে তারা শাহীনের ভ্যানে করে কেশবপুর হাসপাতালের সামনে দিয়ে সরসকাটি চৌগাছা হয়ে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়া আমজামতলা মোড়ে ফাঁকা জায়গা দেখে শাহীনকে ভ্যান থামাতে বলে। তাদের কথায় শাহীন সেখানে ভ্যান থামায়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, পরে তারা ভ্যান থেকে নেমে শাহীনকে বলে যে, ভ্যান দিয়ে তুই বাড়ি চলে যা এবং বাড়িতে গিয়ে এ সম্পর্কে কিছু জানালে তোকে মেরে ফেলবো। শাহীন ভ্যান দিতে রাজি না হলে তারা ক্ষিপ্ত হয় তার ওপর। তখন তারা ভ্যানের সিটের উপর লোহার সঙ্গে শাহীনের মাথা জোরে কয়েকবার আঘাত করে। এতে অচেতন হয়ে পড়ে শাহীন। পরে তাকে ওই অবস্থায় পাটক্ষেতে ফেলে চারজন ভ্যানটি নিয়ে সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা এলাকায় রওনা হয়।

ঝাউডাঙ্গা বাজারে এসে প্রথমে বাকের আলীর কাছে চারটি ভ্যানের ব্যাটারি ৬ হাজার ২৩৬ টাকায় বিক্রি করে। পরে সাতক্ষীরার কলারোয়া বাজারে গিয়ে মির্জাপুর মোড়ে আরশাদ পাড় অপরফে নুনু মিস্ত্রির কাছে ভ্যানটি সাড়ে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। পরে তারা টাকা ভাগ করে নিয়ে কেশবপুর নিজ বাড়িতে চলে যায়।

তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে এখনও কয়েকজন জড়িত রয়েছে। যাদের নাম এখনই প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাদের আটক করা হবে।

প্রসঙ্গত, শাহীন বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। সোমবার তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়া হয়েছে। তবে অক্সিজেন লাগানো আছে। সে ‘মা-মা’, ‘আল্লাহ-আল্লাহ’ বলে ডাকছে। কেউ ডাকলে সাড়া দিচ্ছে। তার অপারেশন সফল হয়েছে, শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।

সোমবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শাহীনকে দেখতে এসে একথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক।

চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, তার ওষুধপত্র, চিকিৎসায় যা যা প্রয়োজন হাসপাতাল থেকে সব দেয়া হচ্ছে। তার প্রতি আমাদের বিশেষ নজর আছে, প্রধানমন্ত্রীও তার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমরা চাই না কেউ এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হোক। আল্লাহর রহমতে শাহীন সুস্থ হয়ে তার কাজে ফিরে যাবে।

বিএ-১২/০১-০৭ (আঞ্চলিক ডেস্ক)