ফেরিতে স্কুলছাত্রের মৃত্যু, ছেলের শোকে হাসপাতালে মা!

যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় তিন ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ির ১নং ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে মারা যাওয়া স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মা সোনামণি ঘোষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

একমাত্র ছেলের অকাল মৃত্যুর শোকে কাতর হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রোববার রাতে তাকে নড়াইলের কালিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী ভিআইপির বিচার দাবি করেন সোনামণি ঘোষ।

নিহত তিতাসের বোন তন্নীসা ঘোষ বলেন, তিতাস মারা যাওয়ার পর থেকে মা খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। একদিকে পুত্র শোক অন্যদিকে খাবার না খাওয়া এবং রাতে দিনে না ঘুমানোর কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা। রোববার বিকেল থেকে তার শরীরের রক্তচাপ কমে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতেই তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিকিৎসক শরীফ সাহাবুবুর রহমান বলেন, মানসিক দুশ্চিন্তা ও আহার-নিদ্রার অভাবে রক্তচাপ ওঠানামা করছে সোনামণি ঘোষের। পরে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। আগের চেয়ে এখন একটু ভালো তিনি। আশা করছি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবেন।

২৫ জুলাই রাতে জেলার শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুরের জন্য ফেরি ছাড়তে দেরি হওয়ার কারণে অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগ ওঠে।

ওই দিন রাত ৮টার দিকে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ১নং ফেরিঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছিল সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত স্কুলছাত্র তিতাসকে বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্স। তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর রাত ১১টার দিকে ফেরিতে ওঠে অ্যাম্বুলেন্সটি। কিন্তু ততক্ষণে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় ওই স্কুলছাত্র।

নিহত তিতাস ঘোষ (১২) নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পৌর এলাকার মৃত তাপস ঘোষের ছেলে। কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল তিতাস।

স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতিরিক্ত সচিবের গাড়ির অপেক্ষায় প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি ঘাটে থাকায় প্রাণ গেল অ্যাম্বুলেন্সের রোগীর। ওই দিন আশপাশের লোকজনের অনুরোধের পরও কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে ফেরি ছাড়া হয়নি। অথচ রাত ৮টায় কাঁঠালবাড়ি ১নং ফেরিঘাটে পৌঁছায় অ্যাম্বুলেন্সটি। তখন কুমিল্লা নামের ফেরিটি ঘাটেই ছিল। কিন্তু ওই কর্মকর্তার গাড়ি না আসা পর্যন্ত ফেরি ছাড়তে রাজি হয়নি ঘাট কর্তৃপক্ষ। কারণ ওই কর্মকর্তার ভিআইপি গাড়ি যাওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক।

এ অবস্থায় রোগীর স্বজনরা ফোন করেন জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে। সাহায্য চান ঘাটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের। কিন্তু কারও কোনো অনুরোধই রাখেনি ঘাট কর্তৃপক্ষ। প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১১টার দিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্টিকার লাগানো সাদা রঙের মাইক্রোবাসটি ঘাটে আসার পর রাত ১১টার দিকে ফেরি ছাড়া হয়। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণে অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয় স্কুলছাত্র তিতাসের।

বিএ-২১/০৫-০৮ (আঞ্চলিক ডেস্ক)