১৮ বছর ধরে শিকলবন্দি আল মামুনের জীবন

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মানসিক ভারসাম্যহীন আল মামুন (৩৪) ১৮ বছর ধরে পায়ে শিকলবন্দি রয়েছেন। নিজ বসত-ঘরের ভেতর তাকে শিকলবন্দি করে রেখেছেন পরিবারের লোকজন।

মানসিক ভারসাম্যহীন আল মামুন হারিয়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কায় পরিবারের লোকজন তাকে শিকলবন্দি করে রেখেছেন।

আল মামুন সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নের দক্ষিণ খাসনগর গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিনের ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আল মামুনের বাবা হেলাল উদ্দিন পেশায় একজন কৃষক। তিনি কৃষি কাজ করেই তার পরিবারের খরচ জোগান দিয়ে থাকেন। মামুনের মাও কৃষি কাজের সহযোগিতা করেন।

একদিকে সংসারের খরচ অন্যদিকে মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তান। অনেকটা হিমশিম খেতে হয় সংসারের খরচ যোগান দিতে। তার ওপর সন্তানের চিকিৎসার খরচ বহন করতে হয়। মা-বাবার কাছে সন্তানের চেয়ে বড় কিছু নেই। সংসার ও পরিবারের সব খরচ যোগান দেয়ার পর ছেলে চিকিৎসায় একটুও কার্পণ্য নেই মা-বাবার।

আরও জানা গেছে, আল মামুনকে বেশ কয়েকবার পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেও সরকারিভাবে কোনো সিট বরাদ্ধ না পেয়ে আবার তাকে তার বন্দী জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আল মামুনের পরিবারের দাবি তাকে সঠিকভাবে চিকিৎসা দেয়া হলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু কে দেবে চিকিৎসার খরচ- এমন প্রশ্ন তার মা-বাবার।

আল মামুনের পিতা মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ১৪ বছর বয়সে মামুনের মাথায় সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা দেয়া শুরু করি। কিন্তু দীর্ঘদিন চিকিৎসা করা হলেও সুস্থ হয়ে উঠেনি আমার ছেলে। চিকিৎসা করতে গিয়ে সব কিছু বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। ফলে বন্ধ হয়ে যায় আল মামুনের চিকিৎসা। আল মামুনকে একটি মুহূর্তের জন্যও বাড়ি থেকে বাইরে যেতে দিতে পারছি না।

তিনি জানান, তিন বছর যাবত গোসলও করাতে পারছি না আল মামুনকে। হাত-পায়ের নখ ও মাথার চুল বড় বড় হয়ে আছে। তবু কাটতে দিচ্ছে না। দেশের অনেক স্থানে চিকিৎসা গ্রহণ করার পর পাবনায় তিন বার ভর্তি করার পরও কোনো সিট বরাদ্ধ পাওয়া যায়নি।

সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে কিংবা গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে এলে আল মামুনের চিকিৎসা করা সম্ভব হতো বলে জানান বাবা হেলাল উদ্দিন।

বিএ-০৮/০৩-১২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)