মুজিববর্ষে মোদিকে আমন্ত্রণ বাতিল চান আল্লামা শফী

সম্প্রতি ভারতের দিল্লির সহিংসতার ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মুজিববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণ বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তিনি। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আনাস মাদানী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিবৃতিতে আল্লামা শফী বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের জনগণ দেখতে চায় না। মোদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে গুজরাট, কাশ্মীর, দিল্লিসহ অনেক রাজ্যে মুসলমানদের খুন করা হয়েছে। চরম নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হয়েছে। তাই যার হাতে এখনো মুসলিম গণহত্যার দাগ লেগে আছে তাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না। অবিলম্বে মোদির রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণ বাতিল করা হোক।

আল্লামা আহমদ শফী বলেন, মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুসলমানদের ওপর যেভাবে জুলুম নির্যাতন চালানো হচ্ছে, তা পরিস্কার রাষ্ট্রীয় নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। শুধু ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সহিংসতায় ২০ জনের অধিক মুসলমান নিহত হয়েছে। মুসলমানদের পবিত্র স্থান মসজিদে আগুন দেওয়া হয়েছে।

মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করা হয়েছে। এরপরও মুসলমান প্রচণ্ড ধৈর্যধারণ করছে। তবে একথা ভুলে গেলে চলবে না, মুসলমান ধৈর্যশীল তবে ভীরু নয়। মুসলমানরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে মোদির মসনদ তছনছ হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, ভারতের শতশত বছরের ইতিহাস, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ঐতিহ্য-অবদানে মুসলমানদের নাম মিশে আছে। ভারতের ঐতিহাসিক বহু স্থাপত্য মুসলমানদের তৈরি। চাইলেই এসব মুছে দেওয়া যায় না। ভারতীয় মুসলমানদের অবদানের কাছে আজ পুরোবিশ্ব ঋণি। বিজেপিসহ কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলো ভারতকে মুসলিমশূন্য করার জন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর ধারাবাহিক যে নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছে তা মোদি ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর পতন ডেকে আনবে।

আহমদ শফী বলেন, নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকে ভারতীয় মুসলমানরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছে। ভারতকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের দেশ দাবি করলেও তা শুধু কথায়, কাজে নয়। শুধু মুসলিম হবার অপরাধে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে প্রতিদিন। কাশ্মীরের মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে, মা-বোনদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। মোদি সরকারের একথা জেনে রাখা উচিৎ, জুলুম-নির্যাতন করে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করা যাবে না।

তিনি বলেন, ইসলাম সবসময় মানবাধিকারের কথা বলে। শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার কথা বলে। অমুসলিম সম্প্রদায়কে নিরাপত্তাদানের কথা বলে। আমাদের দেশের মুসলমানরা বারবার তা প্রমাণ করে দেখিয়েছে। মানবপ্রাচীর তৈরি করে মন্দরি পাহারা দেওয়ার নজীর আমরা দেখিয়েছি। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে বসবাস করছে। অথচ ভারতে এর উল্টো চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি।

ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় সবসময় সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দু সম্প্রদায় কর্তৃক নির্যাতিত নিপীড়িত হচ্ছে। শুধু মুসলমান হবার অপরাধে ঘরবাড়ি, দোকান-পাটে অগ্নসিংযোগ করা হচ্ছে, টাকা পয়সা লুট করা হচ্ছে। ভারতের উচিত হবে নিজেদের দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা।

তিনি আরো বলেন, আমি বাংলাদেশ সরকার ও মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের অনুরোধ করছি, ভারতীয় মুসলমানদের জান মাল ও পবিত্র স্থাপনা রক্ষায় এগিয়ে আসুন। নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধে কার্যকরী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করুন। সব দেশে সকল ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চতিকরণ, জানমালের নিরাপত্তায় একতাবদ্ধ হওয়া আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব।

বিএ-১০/২৭-০২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)