নদীকে খাল বানিয়ে প্রকল্প!

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে এরাবরাক নদীর ভেতরে চলছে ‘খাল পুনঃখনন প্রকল্প’। সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এমন প্রকল্পে বিস্মিত এলাকাবাসী। নদীকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। প্রকল্প বাস্তবায়নে এলজিএস কমিটি নিয়েও রয়েছে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জের আউশকান্দি ও মৌলভীবাজারের খলিলপুরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে এরাবরাক নদী। শুকনো মৌসুমে শ্রীহীন থাকলেও বর্ষায় ফিরে আসে পূর্ণ যৌবন। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে ৯৬ মিটার দীর্ঘ সেতু। কিন্তু সে নদীকেই খাল দেখিয়ে ১০০ ফুট প্রস্থে প্রায় ৬ কিলোমিটার পুনঃখনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প (জাইকা-২)। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে এলজিএস কমিটি এরাবরাক খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ৩১টি চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দল বা এলজিএসকে কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্বার্থসিদ্ধির জন্য এমন কাজ করছে একটি কুচক্রী মহল। যে কোনও মূল্যে নদীকে খালে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করতে চান তারা। এঘটনাকে কেন্দ্র করে নদীর তীরবর্তী মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় চেয়ারম্যান নিজের আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে এলজিএস কমিটি তৈরি করে ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।

হবিগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, একটি নদীকে খালে রূপান্তরিত করে ভুয়া নাম দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা সত্যিই নেক্কারজনক। ব্যক্তি স্বার্থের জন্য পুরো নদীর এমন ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না। এটা রীতিমত নদীর প্রতি জুলুম ও নির্যাতন করা হচ্ছে। এঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

রাবরাক খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি কাজী সাহেদ বিন জাফর বলেন, ‘সরকার প্রকল্পটি খাল হিসেবে দিয়েছে। আমরা শুধু সরকারি আদেশ বাস্তবায়ন করছি।’

আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন বলেন, নদীর প্রশস্ততা বেশি থাকায় পুরো অংশ প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব ছিল না। তাই প্রকল্পের আওতায় আনতেই এটিকে খাল উল্লেখ করা হয়েছে। নদীর মাঝখানে ১০০ ফুট খননের পর নির্দেশনা অনুযায়ী পাশেই রাখা হবে উত্তোলিত মাটি।

কমিটিতে স্বজনদের রাখার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি বলেন, ‘পুরো ইউনিয়নেই আমার আত্মীয়স্বজন রয়েছে। আমরা সবাই একে অপরের আত্মীয়।’

সাড়ে ৩ বছর যাচাই-বাছাই করেও নদীকে কেন খাল দেখিয়ে প্রকল্প নেওয়া হল– এমন প্রশ্নের উত্তরে হবিগঞ্জ ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মাজহার ইবনে মোবারক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। প্রধান কার্যালয় এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবে।’

হবিগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বাছির বলেন, ‘প্রকল্পটি জনবান্ধব না হলে বা ডিজাইনে ভুল থাকলে সেটি সংশোধনে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

এসএইচ-০৯/১৪/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)