ভাসানচর থেকে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা

উন্নত বাসস্থান আর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সত্ত্বেও নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে পালিয়ে কক্সাবাজার ক্যাম্পে চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। পরিবার ছাড়া থাকতে না পেরে এবং খাবার কষ্টে এরই মধ্যে প্রায় ১০০ রোহিঙ্গা সেখান থেকে পালিয়ে গেছে। মূলত স্থানীয় মাঝ ধরা ট্রলার বা নৌযানে করেই পালানোর ঘটনা ঘটছে।

এরই মধ্যে পুলিশের হাতে বেশ কয়েকজন ধরা পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।

মে মাসের শেষ সপ্তাহে ১৩ সদস্যের একটি দল ভাসানচর থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে পৌঁছেছেন। পালিয়ে আসার রোহিঙ্গা নারীদের একজনের সঙ্গে কথা হয় বিবিসির।

তিনি জানান, তারা একসঙ্গে ১৩ জন মাছ ধরা নৌকায় করে পালিয়ে নোয়াখালী আসেন। সেখান থেকে বাসে করে চট্টগ্রাম হয়ে তারা কক্সবাজার আসেন। এতে তাদের ৯০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে বলেও বিবিসিকে জানান তিনি।

পালিয়ে আসার কারণ হিসেবে ওই নারী বলেন, পরিবার ছাড়া সেখানে থাকাটা ভীষণ কষ্টের। একা একা থাকা তার পক্ষে সম্ভব না। তার উপর ছিল খাওয়াদাওয়ার কষ্ট। এমনকি যেসব মেয়েরা একা থাকে (সিঙ্গেল) তাদের ওপর ছেলেরা হামলা করতে চায়। অনেকের ঘরের মধ্যে তালা ভেঙে ঢুকে কাপড়চোপড় অনেক নিয়ে গেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

সর্বশেষ, ভাসানচর থেকে এই রুটে পালানোর সময় একাধিক গ্রুপ এরই মধ্যে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে। গত সপ্তাহে নোয়াখালীতে নারী শিশুসহ ১২ সদস্যের একটি দলকে স্থানীয় জনগণ ধরে পুলিশে দেয়।

ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসার পথে অসংলগ্ন আচরণ দেখে স্থানীয় জনগণ রোহিঙ্গাদের ধরে কোম্পানিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। বিষয়টি নিয়ে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বিবিসিকে জানান এ রকম একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মধ্যে এই প্রবণতা তৈরির কারণ হিসেবে বিবিসি জানায়, ভাসানচর থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটা অংশ আয় রোজগার কমে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া অনেকে মা-বাবা, পরিবার-পরিজন কক্সবাজারে থাকার কারণে তারা সেখানে ফিরে যেতে উৎসাহিত হচ্ছেন। কয়েকজন আছে যারা দ্বীপের মধ্যে মানসিকভাবে নিজেদের বন্দি বলে মনে করছেন।

সেখানে থাকা এক রোহিঙ্গা বলেন, মালয়েশিয়া যাবার পথে উদ্ধার করে যাদের প্রথম ভাসানচরে নেওয়া হয়, তাদের মাধ্যমেই এই প্রবণতা শুরু। রোহিঙ্গাদের পাচার করতে একটি দালাল চক্র তৈরি হয়ে গেছে। এরা স্থানীয় মাছ ধরা নৌকার মাঝিদের সঙ্গে যোগসাজশে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন রূটে পালাতে সহায়তা করছে।

ভাসানচরে নবগঠিত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং সেখানে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও রোহিঙ্গাদের পালানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে এ পর্যন্ত কতসংখ্যক রোহিঙ্গা পালিয়েছেন সেটি সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারেননি।

ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কীভাবে ঠেকানো যায়- সেটি নিয়েও প্রশাসন বেশ তৎপর হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে। রোহিঙ্গারা যেন পালাতে না পারে, সে জন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাসানচরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।

এসএইচ-০৬/১৮/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)