প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে ‘থাকতে পারছেন না’ উপকারভোগীরা

উদ্বোধনের ছয় মাস পার হয়ে গেলেও টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলোতে থাকতে পারছেন না উপকারভোগীরা। স্থানীয়রা জানান, কেউ না থাকায় ওইসব ঘরে মাদকের আড্ডা ও জুয়ার আসর বসানো হয়। এ ছাড়া ধুলাবালি, ময়লা-আবর্জনা পড়ে রয়েছে ঘরগুলোতে।

অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে উপকারভোগীরা এখনও ঘর বুঝে পাননি। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ এবং টিউবওয়েল নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় উপকারভোগীরা প্রধানমন্ত্রীর ঘরে এখনও উঠতে পারেননি।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, গৃহহীন থাকবে না একটি পরিবার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল জেলায় হতদরিদ্র, অসহায় ও গরীব গৃহহীনদের মাঝে দুই শতাংশ জমিসহ আধা পাকা ঘর বিতরণ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথম পর্যায়ে দুই হাজার ২০০ পরিবারের মাঝে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর হস্তান্তরের উদ্বোধন করেন।

সদর উপজেলার রসুলপুর ও চিলাবাড়ীর, ঘর গুলোর নির্মাণ কাজ শেষ। কোথাও কোথাও এখনও রং এর কাজ বাকি রয়েছে। ঘরের কক্ষগুলো নোংরা, জুয়া খেলার তাস, মাদক সেবনের সামগ্রী পড়ে রয়েছে। বাথরুমগুলো অপরিস্কার ও সারিবদ্ধ ঘরের সামনে পানি জমে আছে।

খালি পড়ে থাকায় এবং বহিরাগতদের বিচরণে টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ছবি : আমাদের সময়

এ ছাড়া উঠানের গাছকাটা হলেও বড় বড় শিকড় এখনো অপসারণ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো সেফটি ট্যাংকে লাগানো হয়নি ঢাকনাও।

স্থানীয়রা জানান, উপকারভোগীরা বসবাস না করায় ঘরগুলোর এই বাজে অবস্থা। গত বুধবার সেখানে বিদ্যুতের খুঁটি লাগানো হলেও বিদ্যুতের তার ও সংযোগ দেওয়া হয়নি। কোনো ঘরেই বিদ্যুতের তার, বাল্ব ও সুইচ লাগানো হয়নি।

স্থানীয় রূপচাঁন শেখ বলেন, চিলাবাড়ি গ্রামের ঘরগুলোতে কেউ না থাকায় রাতে আড্ডা ও জুয়ার আসর বসে। ছয় মাস আগে শুনছিলাম ঘরে থাকা শুরু করবে গৃহহীনরা। তবে এখনও পর্যন্ত থাকছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপকারভোগী বলেন, তাদের কষ্ট, দুর্দশা ও দুর্ভোগ দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ঘর দিয়েছে। কিন্তু তারা ৬ মাসেও ঘরে উঠতে পারেননি। অপর দিকে প্রথমে যে তালিকা করা হয়েছিল সেই তালিকাও আবার পরিবর্তন করা হয়েছে। যাদের ঘর বাড়ি আছে তাদেরকেও তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক প্রভাবশালী ও তাদের স্বজনদের নাম ঘর পাওয়ার তালিকায় আছে।

দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাভলু মিয়া লাভু বলেন, ‘ইউনিয়নে কতজন উপকারভোগীর মাঝে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে তার সঠিক তালিকা আমার কাছে নেই। ঘরের তালিকা তৈরিতেও আমাদের সাথে কোনো আলোচনা করে নাই। কবে ঘর দিবে, কাকে দিবে, কোথায় দিবে তাও জানি না। আমাদের কাছ থেকে কোনো নামও নেয়নি, তালিকাও দেয় না।’

গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজ কুমার বলেন, ‘প্রথমে ইউপি মেম্বার, ভূমি অফিসের কর্মকর্তাসহ স্থানীয়দের সহযোগিতায় যে তালিকা করেছিলাম পরবর্তীতে সেই তালিকা রাখা হয়নি। যারা স্লুইচ গেট ও খাস জমিতে বসবাস ঘরে এবং যাদের অগ্রাধিকার প্রথমে থাকার কথা তাদের নাম তালিকায় রাখা হয়নি। ছয় মাস অতিবাহিত হলেও আমার ইউনিয়নে উপকারভোগীরা এখনও ঘরে থাকতে পারছে না।’

সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রানুয়ারা খাতুন বলেন, ‘যে সময় প্রথম পর্যায়ের ঘরগুলো উদ্বোধন করা হয় ওই সময় আমি এখানে ছিলাম না। শুনেছি সদরের বরাদ্দগুলো সবার শেষে এসেছে। সদর উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ২২৮টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। কাজ কিছুটা বাকি থাকায় এখন উপকারভোগীদের ওঠানো হয়নি।’

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংযোগ ও টিউবওয়েল নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় তারা এখনও থাকতে পারেনি। তবে বিদ্যুতের কাজ চলমান রয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে উপকারভোগীরা থাকতে পারবে।’

এসএইচ-১৭/১৮/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)