বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাকের ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

বঙ্গবন্ধুর

কুমিল্লার আদালতে বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাক আহমেদের ছেলে খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বাবুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। জাল-জালিয়াতি করে পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি বিক্রিসহ নানা ধরনের প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

বুধবার বিকেলে কুমিল্লার ৩নং আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম মাহবুব খান এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালত ইশতিয়াককে গ্রেপ্তার করতে দাউদকান্দি থানা-পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এলাকাবাসী জানায়, খুনি মোশতাকের বাবা খন্দকার কবির উদ্দিনের পাঁচ ছেলে এবং পাঁচ মেয়ে। মৃত্যুকালে কবির উদ্দিন বিশাল সম্পত্তি রেখে গেছেন। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুসারে কবির উদ্দিনের কিছু সম্পত্তি কল্যাণমূলক কাজের জন্য ট্রাস্টের নামে লিখে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওয়ারিশসূত্রে বংশের সকল সদস্য বাকি সম্পত্তির মালিক। কিন্তু কবির উদ্দিনের সপ্তম সন্তান মোশতাকের একমাত্র ছেলে খন্দকার ইশতিয়াক আহম্মেদ বাবু বংশের সকল সদস্যের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন।

এছাড়া খন্দকার কবির উদ্দিনের নামে ট্রাস্টের স্বঘোষিত চেয়ারম্যান হয়ে বাবু ওই ট্রাস্টের কার্যালয়ে নিজের এবং স্ত্রী সন্তানদের ছবি টানিয়ে রেখেছেন। কবির উদ্দিনের অন্য ওয়ারিশদের ওই সম্পত্তি এবং বাড়িসহ মাজারে প্রবেশও করতে দেয় না বাবু। ট্রাস্ট এবং দাদার সম্পত্তি দখলে রাখতে মোশতাকের ছেলে এলাকায় একটি বাহিনী গঠন করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কানাডায় বসে ওই বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।

তারা জানান, এরই মধ্যে বাবু বেশ কিছু সম্পত্তির জাল দলিল করে এবং ভুয়া স্বাক্ষরে বিক্রি করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সম্পত্তির ন্যায্য হিসাব এবং ট্রাস্টের উত্তরাধিকারীর অংশীদারিত্ব পেতে কবির উদ্দিনের ওয়ারিশ খন্দকার জাবির আহাম্মেদ সারোয়ার গত বছরের শেষের দিকে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে মোশতাকের ছেলে ইশতিয়াক, নাতি ইফতেখার আহমেদ শাদসহ অভিযুক্ত কেয়ারটেকার নিজামুদ্দিনকে আসামি করা হয়। এতে মোশতাকের ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

মামলার বাদী খন্দকার জাবির আহাম্মেদ সারোয়ার অভিযোগ করে বলেন, খুনি মোশতাকের ছেলে খন্দকার ইশতিয়াক আমাদেরকে ন্যায্য হিসাব থেকে বঞ্চিত করছেন। তিনি কানাডায় বসে দশপাড়া এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছেন। আমাদের ওয়ারিশদের স্বাক্ষর জাল করে বেশ কিছু সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। এছাড়া আরও কিছু সম্পত্তি বিক্রির পাঁয়তারা করছেন। তার নির্দেশে এসব জালিয়াতির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মোশতাকের বাড়ির কেয়ারটেকার নিজামুদ্দিন।

তিনি বলেন, কেয়ারটেকার নিজামুদ্দিনই মোশতাকের ছেলের সকল নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে থাকেন। কানাডায় বসে ওই কেয়ারটেকারের মাধ্যমেই বাহিনী নিয়ন্ত্রণসহ এলাকার আধিপত্য ধরে রেখেছেন মোশতাকের ছেলে ইশতিয়াক।

অপর ওয়ারিশ কাজী রেহা কবির বলেন, খুনি মোশতাক আমার নানার পরিবারের সদস্য হলেও আমরা তাকে প্রাণভরে ঘৃণা করি। সবশেষ গত বছর মাকে নিয়ে হজরত খন্দকার কবির উদ্দিনের মাজার শরীফ জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মোশতাকের ছেলের কেয়ারটেকারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়নি।

ওয়ারিশসূত্রে আমরা এই ট্রাস্টের উত্তরাধিকারী হলেও আমাদেরকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। গায়ের জোরে মোশতাকের ছেলে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হয়ে নিজের এবং স্ত্রী সন্তানদের ছবি টানিয়ে রেখেছেন। এখন যেহেতু তার বিরুদ্ধে আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে অবিলম্বে তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই।

এ বিষয়ে দাউদকান্দি থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যতটুকু জানি মামলায় অভিযুক্ত আসামি খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বাবু বিদেশে পলাতক রয়েছেন। তার পরেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপি হাতে পেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসএইচ-৩৫/২৫/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)