গভীর রাতে রাস্তায় সন্তান প্রসব, কোলে তুলে নিলেন ওসির স্ত্রী

রাত দেড়টা। এক‌টি কাঁচা সড়‌কে ধুলোবালির ম‌ধ্যে নবজাতক সন্তান প্রসব ক‌রেন মান‌সিক ভারসাম্যহীন এক নারী। কি‌শোরগ‌ঞ্জের ক‌রিমগঞ্জ উপ‌জেলার নিয়ামতপুর ইউ‌নিয়‌নের রৌহা এলাকায় গত রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা বিষয়টি থানায় জানালে রাতেই ওই নারীকে করিমগঞ্জ উপ‌জেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় পুলিশ।

করিমগঞ্জ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. হাসান আল তুরাবী জানান, রাত দেড়টার দিকে মা ও নবজাতককে হাসপাতালে আনা হয়। এ সময় মায়ের ব্লিডিং হচ্ছিল। শিশুটিও দুর্বল ছিল। শরীরে ধুলোবালি ছিল। আমরা চিকিৎসা দিয়ে তাদের সুস্থ করি।

হাসান আলী বলেন, মান‌সিক ভারসাম্য না থাকায় প্রসূতি শিশু‌টির দি‌কে কোনো খেয়াল রাখ‌তে পার‌ছিলেন না। হাসপাতাল ছে‌ড়ে চ‌লে যে‌তে চা‌চ্ছিলেন। এতে বিপত্তি বাড়ে। তা‌কে পু‌লি‌শের প্রহরায় রাখা হ‌য়।

এদিকে প্রসূতি মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় এবং শিশুটির খেয়াল রাখার সামর্থ্য না থাকায় বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়ে পুলিশ। পরে প্রশাস‌নের অনুম‌তি নি‌য়ে নবজাতক শিশু‌টি‌কে সেবা-য‌ত্নের দা‌য়িত্ব নেন করিমগঞ্জ থানার প‌রিদর্শক মো. আনোয়ার হো‌সেন ও তার স্ত্রী লাইজু আক্তার। তারা শিশুটিকে বাসায় নিয়ে যান এবং সেখানেই পরম মমতায় শিশুটিকে আগলে রেখেছেন।

করিমগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, খবর পাওয়ার পরই গভীর রাতে মানসিক প্রতিবন্ধী নারী ও তার সন্তানকে হাসপাতালে আনা হয়। ওই নারী বাচ্চার কাছে যাচ্ছিলেন না। হাসপাতাল থেকে চলে যেতে চান। তাই প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে শিশুটিতে আমার বাসায় নিয়ে স্ত্রীর হাতে তুলে দেই। সেখানে আদর-যত্নে শিশুটির সময় কাটছে।

আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী লাইজু আক্তার বলেন, আমার দুটি কন্যা শিশু আছে। শিশুটিকে কোলে নিয়ে মনে হচ্ছে নিজের সন্তান। আমার নিঃসন্তান ননদের জন্য শিশুটিকে দত্তক নিতে চাই। এ জন্য নিয়ম মেনে আবেদন করা হবে। শিশুটিকে পেলে খুবই আনন্দিত হব।

এ বিষয়ে জেলা সমাজ‌সেবা কার্যালয়ের পরিচালক কামরুজ্জামান খান জানান বলেন, নবজাতক শিশু‌টির বিষ‌য়ে উপ‌জেলা শিশুকল্যাণ বো‌র্ডের সভায় পরব‌র্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হ‌বে।

জানা গেছে, নাম প‌রিচয়হীন মান‌সিক ভারসাম্যহীন নারীর সদ্য জন্ম‌ নেওয়া শিশু‌টি‌কে দত্তক নি‌তে পু‌লিশ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের স্ত্রীসহ অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ ক‌রে‌ছেন। ত‌বে এ বিষ‌য়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়‌নি ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

ওই নারী গত কয়েক মাস আগ থেকে রৌহা মোড় এলাকায় ভাসমান অবস্থান ঘোরাফেরা করতেন এবং দোকানের সামনের বারান্দায় ঘুমাতেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এসএইচ-৩২/২৫/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)