ভূমিহীন নয় আসপিয়া, মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

আসপিয়া ইসলাম কাজলের পুলিশ কনস্টবল পদে নিয়োগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হলেও আলোচনা থেমে নেই। ভূমিহীন হওয়ার কারণে পুলিশের চাকরি না পাওয়া নিয়ে দেশব্যাপী আলোচিত আসপিয়া সম্পর্কে এবার বের হয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

বরিশাল জেলায় নিজস্ব জমি না থাকলেও কথিত ‘ভূমিহীন’ আসপিয়া ইসলাম কাজল প্রকৃতপক্ষে ভূমিহীন বা ঠিকানাবিহীন নয়। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ ইউনিয়নের হালিমাবাদ গ্রামে রয়েছে আসপিয়ার পূর্ব পুরুষের জমি ও স্থায়ী ঠিকানা।

রোববার সরেজমিনে হালিমাবাদ গ্রামে অনুসন্ধানকালে আসপিয়ার চাচাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে।

চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ ইউনিয়নের হালিমাবাদ গ্রামের মুগবুল আহমেদ মাতাব্বর বাড়িটি আসপিয়া ইসলাম কাজলের দাদার বাড়ি। স্থানীয় রাজনীতি এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে এই বাড়ির গুণীজনদের সরব পদচারণা আছে। এমনকি বাড়ি এবং বাড়ির বাসিন্দারা গোটা উপজেলায় বিশেষভাবে পরিচিত ও সমাদৃত। অনেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও সক্রিয়।

আসপিয়ার দাদা মুগবুল আহমেদ মাতাব্বর। মুগবুল আহমেদ মাতবরের ৬ ছেলে এবং ২ মেয়ের মধ্যে আসপিয়া ইসলাম কাজলের বাবা শফিকুল ইসলাম ছাড়া অন্য ৫ ছেলে এখনও জীবিত আছেন। ২০১৯ সালে শফিকুল ইসলাম মারা যান। পৈত্রিক ভিটায় আসপিয়ার বড় চাচা মোশারফ হোসেন পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। ওই বাড়িতে আসপিয়ার চাচা ও চাচাতো ভাইদের ১২টি পরিবার এখনও বসবাস করছেন।

আসপিয়ার চাচা মোশারফ হোসেন জানান, ১৯৯০ সালের আগে আসপিয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম চরফ্যাশন থেকে বরিশালের হিজলা উপজেলায় চলে যান। বড় ভাই আমির হোসেন তখন হিজলা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে প্রকৌশলী পদে কর্মরত ছিলেন। কর্মহীন ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম তখন বড় ভাই আমির হোসেনের সঙ্গে অবস্থানের জন্যই হিজলা যান। ১৯৯০ সালে সেখানে ঝর্না বেগম নামে এক ভদ্রমহিলাকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে বড়ভাই আমির হোসেন বদলী হয়ে পিরোজপুর চলে গেলে ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম স্থানীয় ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি ফার্মে চাকরি নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ হিজলা উপজেলার বড় জালিয়া ইউনিয়নের খুন্না গবিন্দপুর গ্রামের ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন।

তিনি জানান, ২০১৯ সনে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সেখানেই অবস্থান করছিলেন আসপিয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম। আসপিয়াসহ ৩ ভাই-বোনের জন্ম হিজলার খুন্না গোবিন্দপুর গ্রামে এবং তারা ওই গ্রামের ভোটার। কিন্তু ২০১৯ সালে শফিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার মরদেহ ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ ইউনিয়নের হালিমাবাদ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দফন করা হয়। আসপিয়াসহ তার পরিবারের অপর সদস্যরাও পূর্বপুরুষের এই ঠিকানায় আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন।

আসপিয়ার চাচা মোশারফ হোসেন আরও জানান, পূর্ব পুরুষদের বিপুল ভূ-সম্পদ থাকলেও এখন এতটা আর নেই। তারপরও আসপিয়ারা মৃত বাবা শফিকুল ইসলামের অংশ হারে এখানে বাড়িতে সাড়ে ১০ শতাংশ এবং নালে চাষযোগ্য ৬৪ শতাংশ জমির মালিক আছেন। বাড়ির অংশ আসপিয়ার চাচারা ভোগদখল করছেন এবং নালের অংশ একসনা লগ্লি করে লগ্লি করা টাকা আসপিয়ার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেন।

আসপিয়ার একমাত্র ভাই ঢাকার গাজীপুরের পোশাক কারখানার শ্রমিক জাহিদ হাসান নয়ন জানান, ভোলার পূর্বপুরুষদের ঠিকানায় বাবার ওয়ারিশসূত্রে আমাদের কিছু জমি আছে বলে শুনেছি। কিন্তু সেখানে কতটুকু কী আছে তা স্পষ্ট জানা নেই।

আসপিয়া রোববার সন্ধ্যায় জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হিজলা উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে তার পরিবারের জন্য জমি ও ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আমাকে চাকরি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করেছেন বলে আমি মিডিয়ার মাধ্যমে শুনেছি। আমি প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

এসএইচ-২৯/১২/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক, সূত্র : সময়)