১০০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ভূমিহীন সজল

দীর্ঘ তিন দশক ধরে বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নে বসবাস অমল চন্দ্র কর্মকার ও বীভা রানী দম্পতির। পেশায় সোনার কারিগর অমল চন্দ্রের আয় রোজগার খুব বেশি নয়। তাই স্থায়ী বসতি গড়া হয়নি এখনও। দীর্ঘ ৩০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন ভাড়া বাসায়।

সদ্য সমাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা তালিকায় চতুর্থ হয়ে আটকে যায় ভূমিহীন এই দম্পতির ছেলে সজল চন্দ্র কর্মকার অন্তরের পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন। নানা ঘটনার পর অবশেষে মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে পুলিশে চাকরি পেয়েছেন ভূমিহীন পরিবারের সদস্য সজল। এতে খুশিতে আত্মহারা বাবা মা ও এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে অমল চন্দ্র কর্মকার বলেন, আমি গরিব মানুষ তাই বরগুনায় জমি কিনতে পারিনি। এ জন্য পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষায় আমার ছেলের চাকরিটি আটকে গিয়েছিল। অবশেষে আমার ছেলের চাকরি হয়েছে। মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে আমার ছেলে এখন বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য। এতে আমি ভীষণ আনন্দিত। আমার ছেলেকে পুলিশে চাকরি দেওয়ার জন্য আমি বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

এ বিষয়ে বীভা রানী বলেন, আমার ছেলের চাকরি হওয়ার কারনে আমাদের পরিবারের একটা গতি হয়েছে। আমরা ভীষণ খুশি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

স্থানীয় হোসনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নান্না মিয়া বলেন, সজলের চাকরি পাওয়ার মাধ্যমে এই ভূমিহীন পরিবারটি সচ্ছল হবে। এই চাকরির ফলে এই পরিবারটির আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চিত হলো। এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

এ বিষয়ে সজল চন্দ্র কর্মকার অন্তর বলেন, ভূমিহীন হওয়ার পরও আমি যে চাকরি পেয়েছি, এ জন্য আমি বাংলাদেশ পুলিশ, পুলিশের আইজিপি এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এভাবে যে আমার চাকরি হয়ে যাবে তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। এ সময় পেশাগত জীবনে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সজল কর্মকার অন্তর।

ভূমিহীন পরিবারের সদস্যদের পুলিশে চাকরি পাওয়ার বিষয়টিকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে বরগুনা জেলা পুলিশ। এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, বাংলাদেশ পুলিশে আগে এ ধরনের নজির ছিল না।

বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর সংশ্লিষ্ট জেলার স্থায়ী ভূসম্পত্তি থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। এবারই প্রথম নিয়োগ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ সদয় বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট জেলায় যাদের ভূমি নেই তাদের চাকরি প্রদান করেছেন।

এসএইচ-২৯/২৯/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)