পেঁয়াজু বিক্রি করেই কোটিপতি মাসুদ

গাজীপুর কালিয়াকৈর। বাজার মোড়ে ফুটপাত। আর সেই ফুটপাতে পেঁয়াজুসহ ইফতারসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন মাসুদ খান নামে এক বিক্রেতা। সুস্বাদু ও মজার ইফতারি, বিশেষ করে তার দোকানে তৈরি পেঁয়াজুর সুনাম রয়েছে বহুদিন ধরে। ফলে গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বিক্রিও চলছে জম্পেশ।

পেঁয়াজুর সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন ৭০-৮০ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। আর তা পবিত্র রমজানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক থেকে দেড় লাখ টাকায়। এভাবেই দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ফুটপাতেই ব্যবসা করে আসছেন মাসুদ।

সময় নিউজকে তিনি বলেন, ‘একটা সময় অনেক কষ্ট করেছি, কিন্তু হাল ছাড়িনি। এই ব্যবসা করে বোনদের বিয়ে দিয়েছি, হোটেল করেছি, বাড়িতে বিল্ডিং করেছি। এখন আমার দোকানে ২০-২৫ জন কর্মচারী কাজ করে। আল্লাহর রহমতে বেশ ভালো আছি এখন।’

শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সরেজমিন দেখা গেছে, গাজীপুর কালিয়াকৈর বাজার মোড়ের ফুটপাতে প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে পেঁয়াজু বিক্রি। তবে বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় ইফতারসামগ্রী বিক্রি। গাজীপুরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলা থেকে মানুষজন পেঁয়াজু ও ইফতারি কিনতে ভিড় করেন। দোকানের মালিক মাসুদসহ চারজন দোকানি বিরতিহীন বিক্রি করেন ইফতারি। দোকানের পাশেই আরও ১৫ জন কর্মচারী কাজ করছেন। কেউ পেঁয়াজ কাটছেন, কেউবা আলু ও বেগুনি চপ বানাচ্ছেন, কেউ আবার পাত্রে ভরে ইফতারি দোকানে নিয়ে আসছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের ৬ বোন ২ ভাই ও মাসহ ৯ জনের দায়িত্ব পড়ে মাসুদের ওপর। সংসারে হাল ধরতেই কোনো উপায় না পেয়ে ফুটপাতে শুরু করেন পেঁয়াজু বিক্রির কাজ। তার এই সুস্বাদু পেঁয়াজু খেতে ছুটে আসে গাজীপুরসহ আশপাশের জেলার হাজার হাজার মানুষ। পেঁয়াজু বিক্রি করে জায়গা জমির পাশাপাশি তৈরি করেছেন নিজের বাড়ি ও বিয়ে দিয়েছেন বোনদের। বর্তমানে তার দোকানে কাজ করেন প্রায় ২০-২৫ জন কর্মচারী। পেঁয়াজু বিক্রি করে সে এখন কোটিপতি।

১০ বছর ধরে তার দোকানে পেঁয়াজু বিক্রি করছেন বাবু। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করেন তিনি। এখানে কাজ করে ১৮ হাজার টাকা বেতন পান। সেই বেতনে পরিবার নিয়ে ভালোই আছেন বলে জানান এই কর্মচারী।

দোকানের ম্যানেজার ওমর উদ্দিন বলেন, ২০ বছর ধরে এই দোকানে কাজ করছি। প্রতিদিন ৭০-৮০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। তবে রোজার মধ্যে প্রতিদিন দেড় লাখ টাকার বেশি বিক্রি হয়। এখানে কাজ করে ৩টা মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। মাসে এখান থেকে ৪৫ হাজার টাকা বেতন পাই।

স্থানীয় চা-বাগান এলাকার বাসিন্দা সুলতানা খাতুন বলেন, ‘এখানে তৈরি পেঁয়াজু ও ইফতারসামগ্রী তুলনামূলক ভালো। কোনো ধরনের ময়দা বা ভেজাল কিছু দেয় না। যার কারণে আমরা দূর থেকে এখানে ইফতারি কিনতে আসছি।’

এসএইচ-১৬/০৮/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)