দেশের জনগণ আমার সাহসের ঠিকানা: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের জনগণ আমার সাহসের ঠিকানা। এ সাহস নিয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। আমরা সেই মানুষের সহযোগিতায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি।

মানুষের সহযোগিতায় সংকট উত্তরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করেছি, ইউক্রেন যুদ্ধ মোকাবিলা করেছি।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনে আয়োজিত সুধী সমাবেশে যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শুরুতেই অশ্রুসিক্ত প্রধানমন্ত্রী সবাই ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেতু যখন করতে যাই, তখন অনেক মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। মানসিক যন্ত্রণা তাদের পরিবারসহ ভোগ করেছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এই সেতু নির্মাণের যারা জড়িত ছিল, তাদের ধন্যবাদ-কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, পাশে থাকার কারণে। দুই পাড়ের যারা পৈত্রিক ভিটেমাটি ছেড়ে দিয়েছে, তাদেরও ধন্যবাদ।

শেখ হাসিনা বলেন, সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। এটা শুধু সেতু নয়, ইট সিমেন্টের কন্সস্ট্রাকশন নয়; এই সেতু আমাদের অহংকার, গর্ব। আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, প্রত্যয়। যে আমরা এই সেতু তৈরি করবোই, সেই জেদ-প্রত্যয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ইতিহাসের এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাংলার মানুষের গর্বের ‘পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এ সেতু নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ পরামর্শক, ঠিকাদার, প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ, শ্রমিক, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ধন্যবাদ জানাই পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের অধিবাসীদের যাদের জমিজমা ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের এই ত্যাগ ও সহযোগিতা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।

তিনি বলেন, কোটি কোটি দেশবাসীর সঙ্গে আমিও আজ আনন্দিত, গর্বিত এবং উদ্বেলিত। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জ্বালা ছিন্ন করে প্রমত্ত পদ্মার বুকে আজ বহু কাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। এ সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয় এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর জেদ।

সরকারপ্রধান বলেন, ষড়যন্ত্রের ফলে আমাদের সেতু নির্মাণ খানিকটা বিলম্বিত হয়েছে, কিন্তু আমরা হতোদ্যম হইনি। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমর আলোর মুখ দেখেছি। পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪১টি স্প্যান যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ ‘দাবায়ে রাখতে পারবে না, পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।। তারুণ্যের কবি, দ্রোহের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায় তাই বলতে চাই: সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়। আমরা মাথা নোয়াইনি।

আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আপনাকে অভিবাদন, আপনাকে গোটা জাতি স্যালুট করে। সারা বিশ্বে আপনি আজ প্রশংসিত। আপনি প্রমাণ করেছেন আমরাও পারি। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রমাণ করেছেন। দুঃসময় চ্যালেঞ্জ নিয়ে সবকিছু অতিক্রম করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন আমরা বীরের জাতি। প্রধামন্ত্রী একা নন, রেহানা, জয়, পুতুল, ববির কী অপরাধ ছিল? একটি পরিবারকে টার্গেট করে হেনস্থা করা হয়েছে। শুধু পরিবার নয়, সারা জাতিকে অপবাদ দেওয়া হয়েছে সেতুর বিনিয়োগ থেকে সরে গিয়ে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারসহ অনেককেই অপমান করা হয়েছে। আমরা আমাদের অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার মতো এমন কমিটেড মানুষ যদি না থাকতেন এমন সংকট, এত প্রতিবন্ধতা অতিক্রম করতে পারতাম না। যারা পদ্মা সেতুর নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা জানেন এখানে কাজ করা কঠিন ছিল। বঙ্গবন্ধুর কন্যার ডাকে সাড়া দিয়ে পদ্মাপাড়ের অনেক মানুষ তাদের বাপ-দাদার বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

পদ্মা সেতুর জন্য একজনেরই কৃতিত্ব। তিনি হলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা, শেখ হাসিনা। কেন পদ্মা সেতুর সঙ্গে তার নাম থাকবে না সেটাই ছিল সবার দাবি। কিন্তু তিনি সেটি গ্রহণ করেননি। কাগজের লেখা নাম ছিঁড়ে যাবা, ব্যানারে লেখা নাম ছিঁড়ে যাবে, পাথরে লেখা নাম মুছে যাবে, কিন্তু হৃদয়ে লেখা নাম রয়ে যাবে। যতদিন পদ্মা সেতু থাকবে সম্মানের সঙ্গে আপনার নামটি উচ্চারিত হবে।

প্রসঙ্গত, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এ সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। গুরুত্বপূর্ণ এ সেতু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বড় শহরের সঙ্গে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক এবং রেল যোগাযোগ স্থাপন করবে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ থেকে শুরু করে নানা কারণে ব্যাপক আলোচিত এ সেতু বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে আজ বাস্তবায়ন হলো।

এসএইচ-০৬/২৫/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)