দেশীয় টাকায় তৈরী পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

স্বপ্ন পূরণে আরও একধাপ এগোলো বাংলাদেশ। দেশের মানুষ দীর্ঘ সাত বছর ধরে যে স্বপ্ন দেখছিল, পদ্মা নদীর ওপরও সেতু হবে, সেই স্বপ্ন পুরণ হলো। পুরো জাতির স্বপ্ন পূরণ হলো শনিবার। শেষ হলো অপেক্ষার দীর্ঘ প্রহর। যে স্বপ্ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মূল সেতুর নির্মাণ ও নদীশাসন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন, তাঁর হাত দিয়েই উদ্বোধন হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। দুয়ার খুললো সেতুর, মেল বন্ধন হলো দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ৫ কোটি মানুষের।

টোল দিয়ে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। মাওয়া প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে মোনাজাতেও অংশ নেন।

সুধী সমাবেশে অংশগ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর প্রকাশ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী টোল প্লাজায় যাবেন। সেখানে তিনি টোল দিয়ে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করেন।

জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক এবং ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন। উদ্বোধনের পরের দিন ২৬ জুন ভোর ৬টা থেকে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

একনজরে পদ্মা সেতু

প্রকল্পের নাম: পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প।

প্রকল্পের অবস্থান: রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে।

যেভাবে শুরু: ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। এরপর ২০০১ সালে জাপানিদের সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাই হয়। ২০০৪ সালের জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সুপারিশ মেনে মাওয়া-জাজিরার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই তাদের নিয়োগ দেয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু করার চূড়ান্ত নকশা করা হয়।

একনেক সভায় অনুমোদন: ২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। পরে নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বাড়ে। ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারও আট হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ালে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সবশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর পুরো টাকাই সরকারি অর্থায়ন।

প্রকল্পের মেয়াদ: ১ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ৩০ জুন ২০২৩।

প্রকল্পের মোট ব্যয়: ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।

মূল সেতুর ঠিকাদার: পদ্মা সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি।

মূল চুক্তিমূল্য: ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

কাজ শুরু: ২৬ নভেম্বর, ২০১৪।

চুক্তি অনুযায়ী কাজ সমাপ্তির তারিখ: ২৫ নভেম্বর, ২০১৮। পরে কয়েক ধাপে সময় বাড়ানো হয়।

কাজের মূল সময়সীমা: ৪৮ মাস। বর্ধিত সময় ৪৩ মাস।

কাজ সমাপ্তির পুনঃনির্ধারিত তারিখ: ৩০ জুন, ২০২২ (বর্ধিত সময়সহ)।

রেল সংযোগ: পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হচ্ছে স্প্যানের মধ্য দিয়ে।

অফিসিয়াল নাম: পদ্মা সেতু।

নকশা: আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইসিওএমের (AECOM) নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শকদের নিয়ে গঠিত একটি দল।

ধরন: পদ্মা সেতুর ধরন দ্বিতলবিশিষ্ট।

প্রধান উপকরণ: কংক্রিট ও স্টিল।

রক্ষণাবেক্ষণ: বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

দৈর্ঘ্য: পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।

প্রস্থ: পদ্মা সেতুর প্রস্থ হবে ৭২ ফুট, এতে থাকবে চার লেনের সড়ক। মাঝখানে রোড ডিভাইডার।

ভায়াডাক্ট: পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার।

ভায়াডাক্ট পিলার: ৮১টি।

পানির স্তর থেকে উচ্চতা: ৬০ ফুট।

পাইলিং গভীরতা: ৩৮৩ ফুট।

মোট পিলার: ৪২টি।

মোট পাইলিং: ২৮৬টি।

সংযোগ সড়ক: পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার।

মোট লোকবল: পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করছে প্রায় চার হাজার মানুষ।

প্রবৃদ্ধি বাড়বে: ১ দশমিক ২ শতাংশ।

নদীশাসন: প্রকল্প এলাকায় প্রায় ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন করতে হয়েছে। এর মধ্যে মাওয়া এলাকায় ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং বাকি ১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার জাজিরা এলাকায়।

ঠিকাদারের নাম: সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড চায়না।

চুক্তিমূল্য: ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

ভূমি অধিগ্রহণ: ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ২ হাজার ৬৯৩ দশমিক ২১ হেক্টর।

অ্যাপ্রোচ রোড: জাজিরা ও মাওয়া।

সেতু পাড়ে বৃক্ষরোপণ: লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪ লক্ষাধিক।

এসএইচ-০৭/২৫/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)