মাংস নিয়ে ছাত্রলীগের মারামারি, আহত ৮

নেত্রকোনার সদর উপজেলায় শোক দিবসে মাংস নিয়ে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত আটজন আহত হয়েছেন।

সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বাগরা গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মহিষের মাংস দেয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- জেলা ছাত্রলীগের সদস্য সুলতান মাহমুদ মিলন, চল্লিশা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুল জলিল, সম্পাদক সাইফুর রহমান লালু ও যুগ্ম সম্পাদক যুবায়ের জনিসহ আটজন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার চল্লিশা ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান শোক দিবস উপলক্ষে ওয়ার্ড পর্যায়ে গণভোজের জন্য একটি মহিষ জবাই করে ৯টি ওয়ার্ডে সমান ভাগ করে দেন। আর এই মাংস প্রতি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদকরা নিয়ে যান।

সোমবার সকালে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর শুরু হয় রান্না। এ সময় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিম খান পাঠান বিমলের সঙ্গে ইউনিয়ন যুবলীগ-ছাত্রলীগের ২০ থেকে ২৫ নেতাকর্মী নিয়ে বাগরা গ্রামে যান। সেখানে বর্তমান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান মানিকের ভাতিজা জেলা ছাত্রলীগের সদস্য মিলনের সঙ্গে তাদের তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে মিলন আহত হলে গ্রামের মানুষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে উভয় পক্ষেরই অন্তত আটজন আহত হন।

আহতদের মধ্যে গুরুতর চারজনকে নেত্রকোনা জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। এদের মধ্যে তিনজনই জিএম খান পাঠান বিমলের পক্ষের।

চল্লিশা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, সকালে যুবলীগের সভাপতি জলিল, লালুসহ আরও একজন গিয়েছিলেন বাগরা বজারে। দুটি দোয়া মাহফিল হচ্ছে। সেখানে ঘুরতে গেছেন। যুবলীগের সভাপতি যেতেই পারে। এরপর আমরা ঘুরে আসতে গেলাম। সেখানে গেলে বিপ্লব খা বলেন তাদের মাংস মিলন নাকি চুরি করে নিয়ে গেছে। এটিই তাদের জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মিলন গ্রুপ জনিকে মারধর করে। পরে আমি নিয়ে আসি। এরপর আবার জলিলকেও মারে।

এ দিকে আহত জেলা ছাত্রলীগের সদস্য সুলতান মাহমুদ মিলন বলেন, সকাল থেকে ভালোভাবেই প্রোগ্রাম চলছে। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রতন মাংস এনেছেন। তারা রান্না করছেন, আমি বসে আছি। এর মধ্যে আমাকে পিছন থেকে এসে থুঁতনিতে ধরে হুমকি ধমকি দিয়ে চশমা ভেঙে মারধর শুরু করেন। তারা কেগাতি ইউনিয়ন থেকে এখানে ২০ থেকে ২৫টি হোন্ডা নিয়ে এসে মহড়া দেয়া শুরু করে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মরণে একটা দোয়া মাহফিলে এমন হামলা আশা করিনি। তাদের আধিপত্য দেখাতেই স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়ে অন্য ইউনিয়ন থেকে এখানে পাওয়ার দেখাতে এসেছে। চেয়ারম্যান সব ওয়ার্ডে মাংস দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে। আমার কাছেও না। কিন্তু তাদের এটি পূর্ব পরিকল্পনা ছিল। পরে আমার ওপর হামলা দেখে রান্না রেখে এলাকাবাসী এসে তাদের ধাওয়া করেছে। আমি আহত অবস্থাতেও তাদের যেন কিছু না করে গ্রামবাসীকে অনুরোধ করি।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রতন বলেন, চেয়ারম্যান মাংস দিয়েছে আমাকে। আমার নামে তালিকা রয়েছে। সুলতান মাহমুদ মিলন আমার সঙ্গে ছিলেন। তিনি বসে রান্না দেখছিলেন। এমন অবস্থায় তারা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে মিলন কোথায়? এরপর তারা মিলনের ওপর হামলা শুরু করে দিয়েছে। এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত; তা নাহলে আমি ওয়ার্ডের সেক্রেটারি। আমার কাছে মাংস দিয়েছে, তারা কেন এসে মিলনকে মারবেন? তারা কেন মাংস নিতে চাইবেন?

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহামানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে একাধিকবার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

এ দিকে নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আহত হয়েছে উভয়পক্ষের লোকজন। অভিযোগ দিলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।

এসএইচ-২০/১৫/২২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)