আখাউড়া-আগরতলা রুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে জুলাইয়ে

আগামী জুলাই মাসেই শেষ হচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ কাজ। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ট্রেন চালানো হবে। এরপরই দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই রেলপথটির উদ্বোধনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে।

সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় প্রকল্প এলাকা ঘুরে এসব কথা জানান বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এসময় ভারতীয় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘এই রেলপথটি চালু হলে ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। এদিকে রেলপথ দ্রুত চালুর খবরকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে যেন আগ্রহের শেষ নেই। এলাকাবাসীর দাবি, এই রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যেন এলাকাবাসীকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

খারকুট গ্রামের বাসিন্দা মো. ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা প্রকল্পের জন্যে জমি দিয়েছি। বিনিময়ে হয়তো সরকার টাকা দিয়েছে। কিন্তু আমরা ত্যাগ স্বীকার করেছি। তাই আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাব, এ প্রকল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে আমাদের এলাকার বাসিন্দাদের যেন সুযোগ দেয়া হয়।

এদিকে সোমবার দুপুরে রেলপথ নির্মাণকাজের সবশেষ অবস্থা পরিদর্শন শেষে প্রকল্প পরিচালক মো. আবু জাফর মিয়া জানান, অপেক্ষার পালা ঘনিয়ে আসছে। আগামী জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহেই আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে পরিক্ষামূলকভাবে চলবে আন্তর্জাতিক ট্রেন।

আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের মোট ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে পৌনে ৭ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অংশে ৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের মোট ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুলাই মাসেই পরীক্ষামূলকভাবে এইপথ দিয়ে ট্রেন চলাচল করানো সম্ভব হবে।

এদিকে বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) মো. ইয়াসীন জানান, খুব শিগগিরই আমরা এই প্রকল্পটি চালু করে দেব। এ প্রকল্পটি চালু করার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষসহ আমরা সবাই কাজ করে যাচ্ছি। কাজের কিছু অংশ এখনও বাকী আছে। সেগুলো শেষ হয়ে গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা এটি চালু করে দেব। আস্তে আস্তে আমরা পুরো রাস্তাটি ডুয়েল গেজ করে ফেলব। সেজন্য হয়তো একটু সময় প্রয়োজন। এ প্রকল্পটি চালু হলে ভারতের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ও পণ্য আদান-প্রদান বাড়বে। সবদিক থেকে দেশের উপকার হবে।

বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্পটির শুরু থেকে আমি রয়েছি। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের যে ৭টি অঙ্গ রাজ্য রয়েছে, তার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ কলকাতার যোগাযোগের জন্য প্রায় সাড়ে ১৪শ’ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এ রেলপথটি হয়ে গেলে ত্রিপুরা থেকে কলকাতায় যাত্রাপথ অন্তত সাড়ে ৯শ’ কিলোমিটার কমে যাবে। সেই সঙ্গে ভারতের ৭টি অঙ্গরাজ্য যুক্ত হলে চট্টগ্রাম বন্দর ও মাতারবাড়ী বন্দরেরর সঙ্গে পণ্য আমদানি রফতানির ক্ষেত্রে আমূল পরির্বতন হবে। এতে দুই দেশেই ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে অনেকটাই লাভবান হবে।

দুই দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ১০ সদস্য প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন রেলপথ মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন ও অবকাঠামো) মো. ইয়াছিন।

অপরদিকে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বিভাগের যুগ্ম সচিব সতীশ সিভান।

গত ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এই রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ অংশে এই রেলপথ নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪০ কোটি টাকা।

এসএইচ=১৬/০৫/২৩ (আঞ্চলিক ডেস্ক)