রোগমুক্তি ও উত্তম রিজিক লাভের ২ আমল

রোগমুক্তি

মুমিনের প্রতিটি ভালো কাজই দুনিয়া ও পরকালের উপকারে আসে। দুনিয়ার কল্যাণ লাভ ও পরকালকে আলোকিত করার জন্য মুমিনের ২টি নিয়মিত আমল রয়েছে। আমল দুইটি যথাযথ পালনে একদিকে যেমন রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যাবে আবার তা হবে উত্তম রিজিক লাভের মাধ্যম। আর পরকালে তা হবে মুমিনের জন্য জ্যোতি বা আলোকবর্তিকা। আমল ২টি হলো- মুমিনের ওজু ও নামাজ।

>> যথাযথভাবে ওজু করা

পবিত্রতা অর্জনে অন্যতম মাধ্যম ওজু। সব সময় পবিত্র অবস্থায় থাকা ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয় আমল। যথাযথভাবে ওজু করলে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার গোনাহ মাফ করেন। ওজু শুধু গোনাহ মাফের মাধ্যমই নয় বরং ক্ষতিকর রোগব্যাধি ও ভাইরাস থেকে মুক্তি দেয়। আর দুনিয়াতে যারা ওজু অবস্থায় দিনযাপন করবে পরকালের তাদের ওজুর অঙ্গগুলো থাকবে উজ্জ্বল আলাকিত। হাদিসে এসেছে-

হজরত নুআইম ইবনে আবদুল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন তিনি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ওজু করতে দেখলেন। ওজু করার সময় তিনি মুখমণ্ডল ও উভয় হাত এমনভাবে ধুয়ে নিলেন, যেন প্রায় কাঁধ পর্যন্ত ধোয়া হয়ে গেল। তারপর উভয় পা এমনভাবে ধুয়ে নিলেন যে পায়ের নালার কিছু অংশ ধোয়া হয়ে গেল। ওজুর করার পর তিনি বললেন-

আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমার উম্মত ওজুর কারণেই কেয়ামতের দিন দীপ্তিময় মুখমণ্ডল ও হাত-পা নিয়ে ওঠবে। কাজেই তোমাদের যারা সক্ষম তারা যেন অধিক বিস্মৃত দীপ্তিসহ (পরকালে) উঠতে চেষ্টা করে।’ (মুসলিম)

>> নামাজ পড়া

নামাজই একমাত্র ইবাদত, যা মানুষকে দুনিয়ার অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। উত্তম জীবিকা লাভের মাধ্যম হয়। নামাজের উপকারিতা এখানেই শেষ নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞাণে প্রমাণিত নামাজের মাধ্যমে মানুষ অনেক জটিল ও কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পায়। আর বান্দার পরকাল হয় আলোকিত ও উজ্জ্বল। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

‘আপনি আপনার প্রতি নাজিল হওয়া কিতাব পাঠ করুন এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করুন। নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)

অন্য আয়াতে নামাজের পর রিজিকের সন্ধানে বের হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। কারণ নামাজের পর রিজিকের সন্ধানে আসবে সফলতা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘অতপর নামাজ শেষ হলে তোমরা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক)তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ১০)

পরকালে সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। যার নামাজের হিসাব সহজ হয়ে যাবে তার পরবর্তী ধাপগুলো সহজ হয়ে হবে। নামাজ হবে ওই ব্যক্তির জন্য জ্যোতি বা আলোকবর্তিকা। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু মালিক আল-আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওজু ঈমানের অর্ধেক। আলহামদুলিল্লাহ দাঁড়িপাল্লাকে পূর্ণ করে দেয়। সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ একসঙ্গে আকাশমণ্ডলী ও জমিনের মধ্যবর্তী জায়গা ভর্তি করে দেয়। নামাজ হলো নূর (জ্যোতি), সদকা (দান-খয়রাত) হলো (মুক্তির) দলিল এবং ধৈর্য ও সহনশীলতা হলো আলোকবর্তিকা। কোরআন তোমার সপক্ষে অথবা বিপক্ষে সনদ বা সাক্ষ্যস্বরূপ। ভোরে উপনীত হয়ে প্রতিটি মানুষ নিজেকে বিক্রয় করে। (এর মাধ্যমে) সে নিজেকে হয় আজাদ করে অথবা ধ্বংস করে।’ (তিরমিজি)

এ হাদিসটিতে যেমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমলের বর্ণনা করা হয়েছে তেমিন মানুষকে দুনিয়ার প্রতিটি কাজের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। যাতে মানুষ দুনিয়ার যাবতীয় ধ্বংস থেকে নিজেকে হেফাজত করে পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে।

ওজু ও নামাজ এমন দুইটি আমল। যা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য দিনে ৫বার আদায় করা আবশ্যক। নামাজ মানুষের জন্য ফরজ ইবাদত। আর নামাজের জন্য ওজু করাও ফরজ। তাই ওজু ও নামাজ একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কিত।

আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে সব সময় ওজু অবস্থায় থাকার তাওফিক দিন। যথাযথভাবে যথা সময়ে নামাজ পড়ার তাওফিক দিন। দুনিয়া ও পরকালে সফলতা দান করুন। আমিন।

আরএম-২৪/০৪/০৩ (ধর্ম ডেস্ক)