বোন জামাইকে হত্যাচেষ্টার পর নিজ মাথা কেটে মামলা!

সিরাজগঞ্জ শহরের গোসালা হেলিপোর্ট এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে নিজ বোন জামাই লতিকুল ইসলাম লেনিনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় হত্যা চেষ্টার পর যুবক মানিক শহরের একটি হাসপাতালে গিয়ে কথিত ডাক্তার দিয়ে নিজের মাথা কেটে সেলাই করেন।

এরপর সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে কোর্টে বোন জামাই ও ভাগ্নেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, গুরুত্বর আহত লতিকুল ইসলাম লেনিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঘটনায় লেনিনের স্ত্রী ভাইয়ের বিরুদ্ধে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।

মামলা ও তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের হেলিপোর্ট রোডের মৃত মফিজ উদ্দিনের মেয়ে রোমানা খাতুন পৌত্রিক সূত্রে দেড় শতক পান। সেই জায়গায় স্বামী লতিকুল ইসলাম লেলিনকে নিয়ে ঘর তুলে বসবাস করতে থাকেন। কিন্তু বড় ভাই মানিক বোনের ঘর ও জায়গা দখলের পায়তারা শুরু করেন। এ নিয়ে ভাই-বোন ও বোন জামাইয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। গত ১২ জানুয়ারী মানিক সেখ ও মানিকের শ্যালক মারুফ, ভাতিজা রাজু, মঞ্জু ও তার স্ত্রী লোপা কয়েকজন সন্ত্রাসীসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে লেলিনের বাড়িতে যায়।

সেখানে গিয়ে ছোট বোন রুমানাকে তার ঘর থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে। এসময় স্বামী লতিকুল ইসলাম লেনিন বাঁধা দিলে তাকে হত্যার জন্য মারপিট ও চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। এতে লেলিনের মাথার পিছনে রক্তাক্ত জখম হয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। এঘটনায় লেলিনের স্ত্রী রোমানা বাদী হয়ে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ঘটনার পরদিন সদর থানার উপ-পরিদর্শক শাহ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। অন্যদিকে, বোন জামাইকে হত্যা চেষ্টার পর অবস্থা বেগতিক দেখে মাদকসেবী মানিক সেখ বোন জামাইকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। সে শহরের ধানবান্ধি মহল্লায় শমরিতা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড পলি ক্লিনিকে গিয়ে কথিত এক চিকিৎসক দিয়ে নিজের মাথা সামান্য কেটে সেলাই করার পর সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে ভর্তির নাটক করে একটি সার্টিফিকেট তুলে বোন জামাই ও ভাগ্নেদের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের করেন।

সরেজমিনে শহরের ধানবান্ধি মহল্লায় শমরিতা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড পলি ক্লিনিকে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালে এক কর্মকর্তা জানান, ১২ জানুয়ারী সন্ধ্যার পর মানিক সেখ ও তার এক বন্ধু মোটরসাইকেল নিয়ে ক্লিনিকে সামনে আসে। হন্তদন্ত ক্লিনিকে ঢুকেই বিএনপি নেতা সাবেক এক চেয়ারম্যানকে খোঁজ করতে থাকে। পরে ওই চেয়ারম্যান আসলে ক্লিনিকের ভিতরে যায়। আধাঘন্টা পর তার মাথায় কাটা অবস্থায় ক্লিনিক থেকে বের হয়ে যায়। তিনি আরো জানান, হাসপাতালের পাশের বিল্ডিংয়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে মানিক সেখ সুস্থ অবস্থায় ক্লিনিকে ঢুকেছে আর মাথা কাটা অবস্থা নিয়ে ক্লিনিক থেকে বের হয়ে যায়।

হাসপাতালের পাশে মিথিলা স্টুডিওর মালিকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, সন্ধ্যার পর আমাকে স্টুডিও থেকে হাসপাতালে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে বিএনপি এক নেতা সাবেক চেয়ারম্যানসহ মানিক সেখ দেখতে পাই। এরপর তারা আমাকে দিয়ে মাথা কাটার ছবি তোলায়। আমি ছবি তুলে তাকে প্রিন্ট করে দিয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয় ছিল।

অন্যদিকে, আহত লেলিনের ভাগ্নে সেতু জানান, লেলিন মামাকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নেয়ার সময় দেখতে পাই একজন সাবেক চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে মানিক সেখ হাসপাতালে আসেন এবং প্রভাব খাটিয়ে তাৎক্ষনিক হাসপাতাল থেকে সার্টিফিকেট তুলে নেন। পরদিন কোর্টে গিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মানিক সেখের মিথ্যা মামলাটি সঠিক তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং লেলিনকে হত্যা চেষ্টাকারী মানিকসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতারের দাবি জানান তারা।

লেলিনের স্ত্রী রোমানা খাতুন জানান, বড় ভাই মানিক সেখ সন্ত্রাসী নিয়ে বিকেলে আমার স্বামীকে হত্যা উদ্দেশ্যে মারপিট করে। গুরুত্বর অবস্থায় সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়াও একই দিন সন্ত্রাসী মানিক সেখ সকালে বোন জামাইদেরও দোকানপাট ভাংচুর করেছে। এ ঘটনায় একই দিন থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

এদিকে সদর থানার উপ-পরিদর্শক শাহ আলম জানান, জমিজমা বিরোধ নিয়ে ভাইবোনের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে লেলিনকে মারপিট করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে মানিক সেখের মারপিটের বিষয় নিয়ে তদন্ত গেলে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে ভর্তি আছে জানতে পেরে হাসপাতালে গেলেও তাকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক তদন্তের বিষয়টি ওসিকে অবহিত করা হয়েছে। তার নির্দেশনা মোতাবেক মামলা রুজুসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসএইচ-২৩/১৫/২২ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)