রাজশাহীর সোমার মাথায় সাফল্যের আরও একটি পালক

নারীর জীবন সংগ্রাম নিয়ে ছবি আঁকাতে আঁকতে সফলতা যেন ছুঁয়ে চলেছে নারগিস পারভিন সোমাকে। রাজশাহীর পদ্মা পাড়ের এই মেয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা রেখেছেন। এ বছরের প্রথম এ্যাওয়ার্ড পেলেন ফেব্রুয়ারীতে। আর তা বেস্ট পেন্টিং এ্যাওয়ার্ড। ভারতের ওরপিতাম কালা মন্দিরের আয়োজনে রাজস্থান জয়পুর চতুরিক আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত চিত্রপ্রদর্শনীতে অংশ নেয়া ড্রাই পয়েন্টে পিন্টের ওম্যান লাইফ-৮ এর জন্য তাঁর এই অর্জন। শুক্রবার সবার হাতে এ্যাওয়ার্ড তুলে দেন আয়োজনের মুল কান্ডারি গৌতম দাস। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ১৩টি এ্যাওয়ার্ড অর্জন হলো রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষকের।

সব রং যেন তুলিকে ছাপিয়ে কলরব করে ওঠে সোমার। চারপাশের আবহ রমণীয় ও মোহনীয় করে চিত্রের মাধ্যমে তোলাই যেনো এখন তার কাজ। কথা বলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। বিভিন্ন তুলির আঁচড়ে। প্রকাশভঙ্গিরও রয়েছে ভিন্নতা। তাই সোমা এখন আন্তর্জাতিক শিল্পাঙ্গনে রাজশাহীসহ দেশের সুনাম কুড়িয়ে আনছেন।

যার সকালটা শুরু হয় নতুন কোন ছবির গল্প নিয়ে। কাপড় কিংবা সাদা মোটা কাগজে আঁকা রূপসিদের কোন রং মাখিয়ে চরিত্রের রূপায়ন করবেন সেটাও মাথায় ঘুরপাক করতে থাকে। রান্না ঘরে চুলায় হাড়ি কিংবা খোলাতে সুস্বাদু খাবার বানানোর সময় হাতের লাকড়িটার রংতুলির আঁচড়ের কথা বলে দেয় তাঁকে। যেনো ছবির জগতেই নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে পছন্দ করেন সোমা। তাইত একের পর এক সাফল্য ধরা দিতে শুরু করেছে তাঁর হাতে।

বিভিন্ন চিত্র প্রদশর্নীতে নারীর জীবন সংগ্রাম বিষয়ক ছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্জন করেছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন এ্যাওয়ার্ড। ইতমধ্যে এমন ছবি এঁকেছেন ১৬টি। আর এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন ১৩টি। যার মধ্যে ১২টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। সর্বশেষ এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন গত বছরের নভেম্বরে।

ভারতের জয়পুরে এই আয়োজনে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, আমেরিকা, জিস্বাবুয়ে ও ইরানের ৭০ জন শিল্পি অংশ নেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হওয়া ট্রাই আর্ট এর আয়োজনে এই প্রদর্শনী চলবে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। এই শিল্পিদের মধ্যে বেস্ট পেন্টিং এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কল্যান মুখোপাধ্যায়, খুক্ক আদিত্য, উওম মান্না, উসা রঞ্জন মন্ডল, নরেন্দ কুমার, বাংলাদেশের নারগিস সোমা, মাহফুজা বিউটি, সরমিলা কাদের, মনিসা সাহা, বুজয় রকসিত গেবিন্দ রায়।

বিশেষ এ্যাওয়ার্ড পান বাংলাদেশের এম, ডি, সাইফুল ইসলাম, লাফিজা নাজনিন, এম ডি ইলিয়াস হোসেন, ফাল্গুনি কুমার গাইন, তাগমিদা তারু, মনিরা বেগম লিপি, সত্তিয়া নারায়ন বারই। সৌরভ ভানিয়া, সাঞ্জয় ঘোস, তাপস দাস, জাজবির সিংহ বিক। এ্যাওয়ার্ড অফ একজিলেন্স পান বাংলাদেশের সঞ্চিতা সাহা। সিনিয়ার এ্যাওয়ার্ড পান ভারতের সমারেন্দ কুমার দত্ত, জুনিয়ার এ্যাওয়ার্ড সওমিয়া জিত।

সোমা বলেন, এই অর্জন কেবল আমার নয় পুরো বাংলাদেশের অর্জন। নারীর জীবন সংগ্রামের ছবি চিত্রপ্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে যে সাফল্যের ধারাবাহিকতা রয়েছে তা সর্বস্তরের মানুষের দোয়া রয়েছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে। নারীরা যে কেবল ঘরে বন্দি হয়ে থাকে না। তারাও কিছু করতে পারে সেটাই জানানোর চেষ্টা করছি। যাতে অন্যান্য মেয়েরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছবি আাঁকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সর্বাত্বক চেষ্টা রয়েছে আমার।

এসএইচ-২৯/২৩/১৯ (সুমন হাসান)